পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১
মাঝির ছেলে

 রূপা মাথা নেড়ে বলে, “না, গাল দিবো।”

 “গাল দিবো না, নে। আর শোন, তরে আমি বিয়া করুম, রূপা।” শুনে জালুভরা চোখ মেলে রূপা অবাক হয়ে নাগার দিকে চেয়ে থাকে।


 নোয়াখালির দিকে যখন লঞ্চ চলছে, নাগা যাদববাবুকে বলল, “কর্তা, আপনের আংটি নকুইলার মাইয়ারে দিয়া দিছি।”

 “তুই দেখি মস্ত দাতা হইছস নাগা।”

 ‘রামলক্ষ্মণের লাইগা—সেই যে বেজী না সেই দুইটার লাইগা মাইয়াটা কাইন্দা মইরা যাইতেছিল, তাই দিছি। পোলার মত মানুষ করছিল, মনে বড় লাগছে মাইয়াটার।’

 যাদববাবু গম্ভীর হয়ে গেলেন।—“আমি জানতাম না। নাগা। নকুইলা কিছু কয় নাই। ফিরা গিয়া ফিরাইয়া দিমু|”

 রূপার মনে কষ্ট দেওয়ার জন্য যাদববাবুর ওপর রাগ করে নাগার মনে কদিন যে কষ্ট ছিল, এতক্ষণে সেটা মিলিয়ে গেল। খুশী হয়ে সে দেখতে গেল ভিমনার জাহাজ চালানো।

 ভিমনা ভেবেছিল, জলকন্যার বিপজ্জনক অভিযানের জন্য না জানি কত আয়োজন দরকার হবে। আয়োজনের অভাব দেখে সে একটু ক্ষুন্ন হয়ে গেল। যাবার পথে খালাসীলস্করদের মধ্যে তিনজনকে বিদায় দিয়ে ভিমনা নতুন তিনজন লোককে বাহাল করল। বাস, যে ব্যাপারের কথা ভাবলেও ভিমনার রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, তার সব ব্যবস্থা শেষ! তিনজন লোককে বদল করার পর লঞ্চে নাকি নাগা আর যাদববাবু ছাড়া একজনও রইল না, ভিমনার সঙ্গে যাদের অনেকদিনের ঘনিষ্ঠত নেই।”

 ভিমনা, বলে, “ওনারাই বিপদ ঘটান কর্তা, কথা ফাস কইরা দ্যান। সগ গলে যে ইচ্ছা কইরা করে তা’ না, বোকার লাখান গল্প করে দশজনের কাছে, শ্যাষে পুলিশের কানে যায়। জানা মাইনষের রাখা ভাল, রুলের গুতায় অগো মুখ খুলবো না।” '

 চাঁদপুর ছাড়িয়ে নোয়াখালির উপকূল ঘেষে যখন লঞ্চ চলে, একদিকে নারকেল গাছে আচ্ছন্ন তীরভূমি আর অন্যদিকে তীরহীনু জলরাশির দিকে