পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৬৪

আর বিশেষ কোন দিকে যাচ্ছে না, কয়েক মাইল পরিধিতে চক্র দিয়ে পাক খাচ্ছে। কিন্তু জাহাজ কই? কোনদিকে তো জাহোজর চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না! কিছুক্ষণ থেকে নাগার মনে একটা জোরালো সংশয় জেগেছে, এই সমুদ্রের মধ্যে জাহাজ আর লঞ্চ পরস্পরকে খুঁজে পাবে কি করে? তীরের কাছাকাছি জায়গায় মানুষ আগে থেকে ঠিক করে রাখতে পারে। অমুক দিন অমুক সময় ঘাটের কাছে আমরা একত্র হব, কিন্তু এখানে নির্দিষ্ট চিহ্ন কোথায়? এখানেও যেমন ঢেউ, দশ মাইল বিশ মাইল দূরেও তেমনি ঢেউ।

 আধা ঘণ্টা পরেও জাহাজ দেখতে না পেয়ে নাগা সন্দেহটা প্রকাশ করে ফেলে। ভিমনা একটু হেসে বলে, “হিসাবের কড়ি কি বাঘে খায় রে ভাই। লাইট-হোঁসের আলো আছে, কম্পাস আছে, চার্ট আছে, ভুল হইবো ক্যান? '

 ভুল হবে না কেন তাও কি নাগা জানে যে বলবে ভুল হবে কেন। জাহাজের আবির্ভাবের প্রত্যাশায় সে মিনিট গুণতে থাকে এবং হঠাৎ ভিমনাকে একদিকে আলোর সঙ্কেত পাঠাতে দেখে সেদিকে চেয়ে দেখতে পায় কয়েকটি আলোকবিন্দু।

 জাহাজকে ভাল করে দেখবার সাধ কিন্তু নাগার মেটে না, কাছে না। এসে জাহাজ দাড়িয়ে থাকে অনেকখানি তফাতে, শুধু আলো আর ঝাপসা চেহারাটাই চোখে পড়ে।

 “কাছে যাইবা না?”

 'না।'

 জাহাজ থেকে মাল নিয়ে এল একটি বোট। ওয়াটার-প্রািফ শিটে মোড়া চ্যাপ্টা বাক্সের আকারের মালগুলি ক্ষিপ্রগতিতে লঞ্চে তুলে নেওয়া মাত্র বোটটি ফিরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে ধারালো একটি ছুরি বার করে ডেনিস একটি পুটলীর ওপরের আবরণ খানিকটা চিরে ফেলল, ভেতরে সে কি দেখল। সেই জানে-সোজা হয়ে দাড়িয়ে ভিমনার। দিকে চেয়ে মাথা হেলিয়ে বলল, “ঠিক আছে।” তারপর ভিমন হুকুম দেওয়া মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুটুলীগুলি নীচে লঞ্চের গুদামে চলে গেল।