বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৫
মাঝির ছেলে

 কিছুক্ষণ পরে সেই বোটেই এল চারটি লম্বাটে কাঠের বাক্স, পাঁচজন অজানা দেশের লোক, তিনজন জাপানী আর জাহাজের একজন অফিসার। লঞ্চে ওঠামাত্র ওই আটজন লোককে ভিমনা ভেড়ার পালের মত একটি কেবিনে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজায় চাবি বন্ধ করে দিল। অফিসারটি জাপানী, বেঁটে এবং রোগা, মুখের ভারিকি ও নিষ্ঠুর অমায়িকভাবের সঙ্গে ছাড়া অফিসারের পোশাকটি একেবারেই মানায় নি।

 ডেনিস পরিচয় করিয়ে দিতে সে সোনা বাধানো দুটি দাত বার করে হেসে যাদববাবুর হাত ধরে নেড়ে দিল এবং ডেনিস যতক্ষণ কাঠের বাক্সগুলির ঢাকনা খুলে ভেতরের জিনিস পরীক্ষা করে দেখতে লাগল, ততক্ষণ ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরাজীতে যাদববাবুর সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতে লাগাল’যেন জগৎসংসারে কোন দিকেই তার দৃষ্টি নেই। বাক্সগুলি পরীক্ষা শেষ করে ডেনিস সোজা হয়ে দাড়ান মাত্র কিন্তু সে তার দিকে ফিরে বলল, “অলরাইট?”

 ‘অলরাইট।”

 পকেট থেকে একতাড়া নোট বার করে ডেনিস তার হাতে গুজে দিল | “ক্ষিপ্রহস্তে তাস ভাঁজার মত নোটের তাড়াটা একবার ভেঁজে নিয়ে সেগুলি নিজেদের পকেটে চালান করে দিল এবং সোনার দাত দেখানো মিষ্টি ভদ্রতার সঙ্গে বিদায় নিয়ে দু’মিনিটের মধ্যে উঠল গিয়ে তার বোটে।

 দু’মিনিটের মধ্যে “জলকন্যা” মুখ ফিরিয়ে বন্দরের দিকে রওনা হল, মিনিটে মিনিটে বাড়তে লাগল। তার গতিবেগ।

 রোমাঞ্চকর অভিজানের এক অধ্যায় শেষ হল। কিন্তু কি শেষ হল। আর কি আরম্ভ হল ভাববার অবসর নাগার ছিল না। তার মনে তখন অন্য চিন্তা পাক খাচ্ছে। মালের পরিমাণ দেখে সে অবাক হয়ে গেছে। কোথায় সে ভাবছিল রাশি রাশি মাল বোঝাই নিয়ে লঞ্চ তাদের ডুবু ডুবু হয়ে যাবে, আর সমস্ত মাল এল একটি বোটো! আসল মাল কি তবে ওই কয়েকজন জীবন্ত মানুষ? ওদের নেবার, জন্য তারা এসেছে, অন্য যা নেওয়া হয়েছে সেগুলি শুধু বাড়তি কিছু?