পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৭০

কই না। শুরু যখন করছি সম্পত্তি ছাড়ানের টাকা তুইলা ভালমন্দ পাপপুণ্যের হিসাব করুম, তার আগে না। তখন খুশী লয় হয় দরিয়ায় ডালি দিমু লঞ্চেরে, নয় বেইচা দিমু কাণাকড়ি নিয়া।’

 ভিমনা বলল, ‘এই কাম পাপ না, কর্তা। মাইন্‌ষেরে যদি কষ্ট দ্যান, তারে কয় পাপ। আপনে কষ্ট দিছেন কারে? জড়োয়া গয়না গেলে কেউ না খাইয়া মরে না, সোনা আর পাথরের বাঁধা মালিক নি কেউ আছে, যে কইলেন চোরাই মাল? গরীবের পয়সা নিয়া একজনে কিনা মালিক হয়, গায়ের জোরে কাইড়া নিয়া আরেকজন মালিক হয়, দেয়ালে সিঁদ কাইটা আরেক জনে—’

 ভিমনা হঠাৎ থেমে গেল, তারপর বলল, ‘বাড়ী গিয়া কয়দিন, বিশ্রাম করি চলেন কর্তা।’

 নাগা ভাবে যাদববাবু যা বলেছিলেন তা মিথ্যা নয়, ন্যায় অন্যায় পাপপুণ্য সম্বন্ধে ভিমনার মতামত যেমন হোক, লোকটার জ্ঞান বুদ্ধি আছে।


আট

 এবার তারা অনেকদিন পরে করমতলায় ফিরল। নাগা ভাবছিল, রূপা কি মাঝে মাঝে তার কথা ভেবেছে? তাকে দেখে রূপা কি খুশী হবে? রাম লক্ষ্মণকে ফিরিয়ে দেবার হুকুম দিয়ে যাদববাবু অনেক আগেই বাড়ীতে চিঠি দিয়েছিলেন; রামলক্ষ্মণকে ফিরে পেয়ে নিশ্চয় রূপার মুখে হাসি ফুটেছে। মনে মনে সে কৃতজ্ঞ হয়ে আসছে তার কাছে।

 বাড়ীতে পৌঁছে উঠানের এককোণে রামলক্ষ্মণের খাঁচাটি পড়ে আছে দেখে নাগা চমকে গেল। রামলক্ষ্মণকে তবে ফিরিয়ে দেওয়া হয় নি। কিন্তু খাঁচা তো শূন্য, রামলক্ষ্মণ গেল কোথায়? ভাবতে ভাবতে কণিকা এসে দাঁড়াল, গম্ভীর মুখে বলল, ‘বেজী দুটো মরে গেছে নাগা।’

 রামলক্ষ্মণ মরে গেছে! রূপা তো ফিরে পায় নি তার রামলক্ষ্মণকে,