পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৭
মাঝির ছেলে

 যাদববাবু মাথা নেড়ে হেসে বললেন, ‘ব্যাপার কি সা’মশায়।”

 নিতাই চিন্তিত মুখে বলল, “একবার জিগাইয়া আসেন দেখি? তোরঙ্গ খুইলা গয়না পত্তিরগুলি একবার মিলাইয়া নিবেন।”

 যাদববাবু হাসিমুখে বাড়ীর মধ্যে চলে গেলেন, মিনিট দশেক পরে যখন ফিরে এলেন, মুখ তার গম্ভীর হয়ে গেছে।

 ‘বৌঠানের কয়টা গয়না মেলে না। সা”মশায়।”

 বড় একটা ট্রাঙ্কের মধ্যে ছোট একটি টিনের বাক্সে কতকগুলি গয়না ছিল, তার মধ্যে কয়েকটা গয়না উধাও হয়ে গেছে, ট্রাঙ্কে যেমন তালাচাবি লাগানো ছিল তেমনি আছে। চাবির গোছাও মাধববাবুর স্ত্রীর আঁচলে বাধা আছে।

 “আপনে জানলেন কি কইরা সা’মশায়?”

 নিতাই সাহা গর্বের হাসি হাসল। বলল, “আমার আজানা কি আছে যাদববাবু। অখন আমার কথা শোনেন, গয়না আপনারে আমি পাওয়াইয়া দিমু, তবে চোরেরে পুলিশে দেওন চলব না, পিটানি দেওনও চলাব না।”

 “যাদববাবু বললেন, “বেশী।”

 নিতাই মুখ গম্ভীর করে বলল, “কি জানেন যাদববাবু, অন্য মাইনষের ব্যাপার হইলে চুপ মাইরা যাইতাম, আমার কিসের মাথা ব্যথা?, পয়সা দিয়া সোনা কিনছি, পয়সা নিয়া বেইচা দিমু, কার কি চুরি গেছে না গেছে আমার কি। তবে আপনে হইলেন ভদ্রলোক, আপনে আমারে বিশ্বাস করেন আপনারে আমি বিশ্বাস করি, জাইনা শুইনা। আপুনের ক্ষতি করি কেমনে? আবার যে আমারে বিশ্বাস কইরা গয়না বেচছে, তারেই বা পুলিশে”দিমুনে কেমনে? বুঝলেন না?”

 যাদববাবু সায় দিয়ে জানালেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন।

 তখন নিতাই বলল, “আপনার পরেশ মাঝিরে ডাকেন। আমি কি জানি ব্যাটা আপনের চাকর, কাইল মোটে জানিছি।”

 পকেট থেকে সোনার গয়না বার করে সে যাদববাবুর হাতে দিল। বাড়ীর ভিতর থেকে সকলের কলরব কানে আসছিল, মাধববাবুর