রাত্রি বেলা। তিনি ডাকছেন বলে মিছামিছি হয়রান করায় নাগার সঙ্গে নকুলের ঝগড়া হয়েছে। ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে নকুলকে ডেকে আনতে অন্য লোক পাঠিয়ে দিলেন।
আধঘণ্টা পরে নকুল এল।
যাদববাবু তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, “সব জাইনা অখন তুমি যদি পরাশার লগে মাইয়ার বিয়া দিতে রাজী থাক নকুইলা, টাকা আমি ফিরত নিমু না?
'চোরের লগে মাষ্টয়ার বিয়া দিমু কর্তা?
‘চোর? চোর কিনা জানি না, নকুল। আমার কিছু কওনের নাই, তোমার যা খুশী করব।” যাদববাবুর মুখ বড় স্নান দেখাচ্ছিল। নাগার মনে হল যেন তার মনের ভাব কিছু কিছু অনুমান করতে পারছে। হয়ত যাদববাবু ভাবছেন, তিনিও তো প্রায় চোর ডাকাতের দলেই ভিড়ে পড়েছেন, চোরের বিচার করবার অধিকার তার কোথায়!
নকুল তার একটিমাত্র চোখ মিটমিট করতে করতে বলল, “না কর্তা, চোরের হাতে মাইয়া দিমু না।”
“আধঘণ্টার মধ্যে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে পরেশ চিরদিনের জন্য এ বাড়ী থেকে বিদায় হয়ে গেল। এত লোকের মধ্যে কেবল নাগাই বোধ হয় তার জন্যে রীতিমত কষ্ট বোধ করতে লাগল। এতকাল চুরি না করলেও লোকটাকে নাগা অশ্রদ্ধা করে এসেছিল। আজ চোর বলে ধরা পড়ার পর তার সম্বন্ধে সে অশ্রদ্ধার ভাব কেটে গেছে। এমন বোকা তো পরেশ নয় যে তার খেয়াল ছিল না বাড়ীতে বাক্স থেকে গয়না। হারিয়েছে আর সে নকুলকে অতগুলি টাকা দিয়েছে জেনেও কেউ তাকে সন্দেহ করবে না।” আর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে মরিয়া হয়ে সে ধরা পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রূপার জন্য গয়না চুরি করেছিল। কাজটা ভাল হোক, মন্দ হোক, চেষ্টা তো সে করেছে, নাগার মত বাধা পাওয়া মাত্র হাল ছেড়ে দেয় নি।