পাতা:মাটি-ঘেঁষা মানুষ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাই তার পাঠক সংখ্যা সীমাবদ্ধ। কারণ অনেক লেখক যেমন সকল সমস্যা ভুলে আপনি কল্পনা বিলাসের সাহিত্য লোকে মুক্তি খোজেন, পাঠকরাও তেমনি গল্প বা উপন্যাসে দৈনন্দিন বিড়ম্বিত জীবনের প্রতিফলন দেখতে চায় না এবং ধিক্কার অথবা নির্মম আক্রমণ সহ্য করতে বিমুখ হয়। মানিক-সাহিত্যে এমন ছেলে-ভুলোনো ছড়াগান নেই বলে তার গ্ৰন্থরাজির সংস্করণ রাতারাতি নিঃশেষিত হয় না। শিথিল সমাজ ব্যবস্থার প্রতি কটাক্ষ এবং এই সমাজের চক্ৰে পিষ্ট চরিত্রগুলির জন্যে গভীর মমত্ববোধ, মানিক বাবুর ব্যক্তিগত জীবনও বিশৃঙ্খল করে তুলেছিল। কারণ তিনিও ছিলেন সেই চরিত্রগুলির মধ্যে একজন। তার জগত রূঢ় কঠিন বাস্তবতার প্রাচীরে সীমিত ছিল। এলিয়টের মতো, গ্রেহাম গ্রীনের মতো, ইভলীন ওয়ার মতো বা আরও অনেক লেখক লেখিকার মতো ভগবানের ওপর সুখ-দুঃখের দায় চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া তার মতো সমাজ-সচেতন লেখকের পক্ষে সম্ভব ছিলনা বলে তিনি একই জীবনে জন্ম-জন্মান্তর দেখাতে চেয়েছিলেন মানুষের ব্যাপক সামাজিক চেতনার মধ্যে দিয়ে। মানিক বাবু নিজেই বলেছেন, ‘সমাজের কোন শ্রেণীতে ভাঙ্গন ধরার অর্থ অনেকে মনে করেন মানুষগুলিরও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে শেষ হয়ে যাওয়া-আসলে মানুষগুলির জীবনও নতুন দিকে গতি পায়, নতুন রূপ গ্ৰহণ করতে থাকে।” তাই বোকা-হাবা চাষীর মেয়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পায় সমাজবোধের দীর্ঘশ্বাসে। ব্যক্তিকেন্দ্ৰিক জীবনের সংকীর্ণ সীমা ভেঙে কেউ সার্বজনীন ব্যাপকতার মধ্যে আত্মপ্ৰতিষ্ঠা করে। মাণিকবাবুর জীবিতকালে যদি সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন হতো। তাহলে বৈজ্ঞানিক রীতি অনুযায়ী তার সীমাবদ্ধ পরিধির কঠিন প্রাচীর শিল্পবোধের গভীরতায় টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারতো।