পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রথম সেনা। শত্রুকে বাঁচাইতে গেলে আমাদের সময় থাকে না। আমি একদণ্ডে ইহার দফা শেষ করিতেছি।

 এই বলিয়া প্রথম সেনা অসি নিষ্কাষিত করিল। দ্বিতীয় সেনা তাহাকে নিবারণ করিয়া বলিল,—“না না, মুমূর্ষু লোকের প্রাণনাশ করিতে আমাদের প্রভু মহারাজ যশোবন্তুসিহ নিষেধ করিয়াছেন, তুমি যাও, আমি ইহাকে বাঁচাইব।

 প্রথন সেনা হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল, দ্বিতীয় সেনা জলসেচন দ্বারা মুমুর্ষ যুবকে জীবিত করিল। যুবা নেত্র উন্মীলিত কবিয়া দেখিল, চারিদিকে শব পড়িয়া রহিয়াছে, আকাশে চন্দ্র উদয় হইয়াছে, যুদ্ধ শেষ হইয়াছে, জগৎ নিস্তব্ধ। যুবক জিজ্ঞাসা করিল— “বন্ধু, তুমি আমার জীবন রক্ষা করিয়াছ, তোমার নাম কি? কোন্ পক্ষের জয় হইয়াছে, সুজা কোথায় গিয়াছেন?”

 সেনা বলিল, “আমার নাম গজপতিসিংহ আমি মহারাজ যশোবন্তুসিংহের একজন সেনানী, এক্ষণে মহারাজ জয়সিংহের আজ্ঞাধীন। তোমার সুজা অতিশয় বিলাসপ্রিয়, তিনি এতক্ষণ বেগমদিগের বিচ্ছেদে পীড়িত হইয়া উধ্বশ্বাসে বঙ্গদেশাভিমুখে চলিয়া গিয়াছেন, হা-হা।

 যুবক অতিশয় ক্ষুন্ন হইয়া ভূমির দিকে অবলোকন করিতে লাগিল। খনেক পরে বলিল,—“তুমি আমার শত্রু, কিন্তু আমার জীবন রক্ষা করিয়াছ, এক্ষণে আমাকে আর একটু সাহায্য কর। একটু জল দাও, আর দুই একদিন থাকিবার স্থান দাও। আমার দেশ অনেক দূর, এখানে আমার একজনও বন্ধু নাই, আমার নাম নরেন্দ্রনাথ দাত্ত দাও,—জল দাও।”

 নরেন্দ্রের বালকাকৃতি দেখিয়া গজপতিসিংহের দয়ার আবির্ভাব হইয়াছিল, বালকের কাতরোক্তি শুনিয়া একটু মমতা হইল, শুশ্রুষা করিয়া শিবিরে লইয়া গেলেন।


॥ দশ॥

 একটি প্রকাণ্ড শিবিরে অভ্যন্তরে দুইজন মহাবীর বসিয়া কথোপকথন করিতেছিলেন। একজন রাজপুত রাজা জয়সিংহ অপরজন তাহা পরম সুহৃদ দেবের খাঁ,জাতিতে পাঠান।

 রাজার বয়ঃক্রম অনেক হইয়াছে, কিন্তু এখনও মুখমণ্ডল যৌবনের তেজে পরিপূর্ণ, শরীর যৌবনের বলে বলিষ্ঠ। সে সময়ে মোগল সম্রাট দিগের প্রধান সেনাপতি অধিকাংশই রাজপুত ছিলেন। রাজপুতদিগের বাহুবীর্যেই মোগলগণ সিন্ধু হইতে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত সমুদয় ভারতবর্ষ শাসন করিতেন। সেখানে ঘোর বিপদ বা ঘোর সংগ্রাম উপস্থিত, সেইস্থানেই রাজপুত সেনাপতি প্রেরিত হইতেন ও প্রায়ই বিজয় লাভ করিয়া আসিতেন। আখ্যায়িকা-বিবৃতকালে রাজপুতানার রাজদ্বিগের মধ্যে দুইজন বিশেষ ক্ষমতাশালী ও

২৬