প্রবল পরাক্রান্ত ছিলেন রাজা জয়সিংহ ও রাজা যশোবন্তুসিংহ। সম্রাট শাজাহান উভয়কেই বিশ্বাস করিতেন ও বিপত্তির সময় ইহাদিগকে রণে প্রেরণ করিতেন। সে সময়ে কি পাঠান, কি মোগল, কোন সেনাপতিরই জয়সিংহের ন্যায় প্রতাপ, ক্ষমতা বা রণকৌশল ছিল না। তৎকালীন একজন বিচক্ষণ ও প্রসিদ্ধ ফরাসী ভারতবর্ষে অনেকদিন ছিলেন, তিনি মুক্তকণ্ঠে বলিয়া গিয়াছিলেন যে, জয়সিংহের মত কার্যদক্ষ লোক সে সময়ে ভারতবর্ষে বোধ হয় আর কেহই ছিলেন না। শাজাহান ও যুবরাজ দারা যখন সুলাইমান শেখকে সুলতান সুজার বিরুদ্ধে পাঠান, সঙ্গে জয়সিংহকে তাঁহার রাজপুত সৈন্যের সহিত পাঠাইয়াছিলেন। বারানসীর যুদ্ধে সুজা পরান্ত হইয়া বই দেশাভিমুখে পলায়ন করিয়াছিলেন।
শিবিরে উজ্জ্বল দীপাবলী জলিতেছে, বাহিরে প্রহরী, তাহার চারিদিকে অন্য সে সময়ে রাজার শিবিরের মধ্যে আর কেহ ছিলেন না, কেবল রাজা ও তাহার সুহৃদ দেবের খা ঁগুপ্তকথা কহিতেছিলেন।
দেবের খা বলিলেন,—“যথার্থই জয়সিংহ নাম পাইয়াছিলেন, আপনি যেস্থানে, জন্ম সেস্থানে।”
রাজা বলিলেন,—“অদ্যকার যুদ্ধের কথা বলিতেছেন? যুদ্ধ কোথায়? বঙ্গদেশের সেনার সহিত যুদ্ধ কি যুদ্ধ? সুলতান সুজাও বঙ্গদেশে থাকিয়া বিলাসপ্রিয় হইয়া উঠিয়াছেন। তাহার সহিত যুদ্ধ?”
দেবের। কিন্তু অন্য যুদ্ধের সময় সুলতান সুজা কি সাহস ও বিক্রম প্রকাশ করেন নাই?
রাজা। তাহা স্বীকার করি। যুদ্ধের সময় তিনি সাহসের পরিচয় দেন, কার্যের সময় বিলাস বিস্তৃত হয়েন। কিন্তু কেবল সাহসে কি হয়, রণকৌশল জানেন না।
দেবের। সম্রাট-পুত্রদিগের মধ্যে কাহার অধিক রণ-কৌশল আছে? আপনি আওরংজীবকে কি মনে করেন?
তাহার নাম করিবেন না, সেরূপ তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন লোক আমি দেখি নাই, যেরূপ বীরত্ব সেইরূপ কৌশল। শুনিয়াছি, তাহার গতিরোধ করবার জন্য রাজা যশোবন্তুসিংহ নর্মদাতীরে যাইতেছেন। যশোবন্তসিংহ রাণার জামাতাও সেইরূপ যোদ্ধা ও বিক্রমশালী; কিন্তু আওরংজীবের সহিত যুদ্ধে কি হয়, জানি না। যশোবন্তের সাহস আছে, কৌশল নাই। আমার বোধ হয়, এই ভ্রাতৃবিরোধে অবশেষে আওরংজীবের জয় হইবে।
দেবে। আপনি দারাকে পরিত্যাগ করিবেন?