পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভাল হয়, আবার হেম শ্রীশের ঘর দেখিতে গেলেই নরেন্দ্র রাগ করে, বালুকাগৃহ পড়িয়া যায়। মহাবিপদ, দুই-তিনবার উৎকৃষ্ট ঘর পড়িয়া গেল।

 হেম এবার আর শ্রীশের নিকট যাবে না, সত্য যাবে না, যথার্থ যাবে না; নরেন্দ্র, আর একবার ঘর কর। নরেন্দ্র মহা-আহ্লাদে চক্ষুর জল মুছিয়া ঘর আরম্ভ করিল।

 ঘর প্রায় সমাধা হইল হেম ভাবিল, নরেন্দ্রের ত জয় হইবে, কিন্তু শ্রীশ একাকী আছে, একবার উহার নিকট না যাইলে কি মনে করিবে? কেশগুচ্ছগুলি নাচাইতে নাচাইতে উজ্জ্বল জলহিল্লোলেব ন্যায় একবার শ্রশের নিকটে গেল। শ্রীশ ক্ষিপ্রহস্ত নহে, বালুকা-গৃহনির্মাণে চতুর নহে, কিন্তু ধৈর্য ও বুদ্ধিবলে একপ্রকার গৃহ করিয়াছে, বড় ভাল হয় নাই।

 নরেন্দ্র একবার গৃহ করে, একবার হেমের দিকে চাহে। রাগ হইল, হাত কঁপিয়া গেল, উত্তম গৃহ পড়িয়া যাইল। নরেন্দ্র ক্রুদ্ধ হইয়া বালুকা লইয়া হেম ও শ্রীশের গায়ে ছড়াইয়া দিল। শ্রীশের জিত, ঘর হইল না।

 নরেন্দ্রনাথ, সাবধান। আজ বালুকাগৃহ নির্মাণ করিতে পারিলে না, দেখো, যেন সংসার-গৃহ এরূপে ছারখার হয় না। দেখো, যেন জীবন-খেলায় শ্রীশচন্দ্র তোমাকে হারাইয়া বিষয় ও হেমলতাকে জিতিয়া লয় না।

 নরেস্থের ক্রোধধ্বনি শুনিয়া ঘাট হইতে একটি সপ্তদশবর্ষীয় বিধবা স্ত্রীলোক উঠিয়া আসিলেন। তিনি শ্রীশের জ্যেষ্ঠা ভগিনী; নাম শৈবলিনী।

 শৈবলিনী আসিয়া আপন ভ্রাতাকে তিরস্কার করিল। শ্রীশ ধীরে ধীরে বলিল, ‘না দিদি, আমি কিছুই করি নাই, নরেন্দ্র ঘর করিতে পারে না, সেইজন্য কাঁদিতেছে, হেমকে জিজ্ঞাসা কর।” “তা না পারুক, আমি নরেন্দ্রের ঘর করিয়া দিব।” এইরূপ সানা করিয়া শৈবলিনী চলিয়া গেলেন। শ্রীশ দিদির সঙ্গে চলিয়া গেল।

 হেম ও নরেন্দ্রের কলহ শীত্র শেষ হইল। হেম নরেন্দ্রের ক্রন্দন দেখিয়া সজলনয়নে বলিল, “ভাই, তুমি কাঁদ কেন? আমি একটিবার ঘর দেখিতে গিয়াছিলাম, তোমারই ঘর ভাল হইয়াছিল, তুমি ভাঙিলে কেন? তোমার কাছে অনেকক্ষণ ছিলাম, শ্রীশের কাছে একবার গিয়াছিলাম বৈ ত নয়? তুমি ভাই, রাগ করিও না। তুমি ভাই, কাঁদ কেন?” নরেন্দ্র কি আর রাগ করিতে পারে? নরেন্দ্র কি কখন হেমের উপর রাগ করিয়া থাকিতে পারে?

 তাহার পর বালক-বালিকার কি কথা? আকাশে কেমন তা ফুটিয়াছে। ওগুলা কি ফুল, না মানিক? নরেন্দ্র যদি একটি কুড়াইয়া পায়, তাহা হইলে কি করে?