পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আওরংজীবের অর্থভুক তিনি যুদ্ধে লিপ্ত হইলেন না। অবশেষে আওরংজীবের জয় হইল।

 যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলপটু আওরংজীব কালীউল্লার সম্মান করিলেন ও মোরাদকে ভারতবর্ষের সম্রাট বলিয়া তাহার মনস্তুষ্টিসাধন করিলেন।

 অচিরাৎ আওরংজীব ছলে-বলে-কৌশলে আগ্রা হস্তগত করিয়া পিতাকে বন্দী করিলেন। শাজাহানের দুই কন্যার মধ্যে কনিষ্ঠা রৌশন আরা সকল বিষয়ে আওরংজীবকে সমাচার প্রদান করিয়া তাঁহার অনেক সহায়তা করিতেন। আওরংজীবের জয় হওয়ায় রৌশন-আরার প্রভুত্ব ও ক্ষমতার ইয়ত্তা রহিল না। শাজাহানের জ্যেষ্ঠা কন্যা জেহান-আরা রূপে, গুণে, কৌশলে কনিষ্ঠা অপেক্ষা অনেক শ্রেষ্ঠা—সে লাবণ্যময়ী সম্রাটপুত্রীকে পাঠক একদিন বেগম-মহলে দেখিয়াছেন। আওরংজীবের জয়ে জেহান আরা হতমান হইলেন, অতঃপর পিতার সেবায় জীবনযাপন করিতে লাগিলেন।

 আগ্রা হস্তগত করিয়া আওরংজীব দিল্লী যাত্রা করিলেন, পথে মথুরাতে মোরাদকে নিমন্ত্রণ করিলেন, মোরাদ মদিরাপানে এবং সুন্দরী গায়িকা ও নর্তকীগণের সৌন্দর্যে মত্ত হইয়া পড়িলেন। মোরাদকে মধ্যে করিয়া সেই জনবিমোহিনীগণ চারিদিকে বেষ্টন করিয়া বসিল, মোরাদ একেবারে প্রমত্ত একজন সুন্দরীর আলিঙ্গনে অচেতন হইয়া পড়িলেন। আওরংজীবের তাহাই উদ্দেশ্য, মোরাদ সেই রজনীতেই কারারুদ্ধ হইলেন।

 তাহার পর? তাহার পর আওরংজীব রাজচ্ছত্র আপন মস্তকের উপর ধারণ করিলেন। দারা সিন্ধুনদের দিকে পলায়ন করিলেন। বঙ্গদেশ হইতে সুলতান সুজা পুনরায় সৈন্য লইয়া যুদ্ধবেশে বহির্গত হইলেন, রাজস্থানে যশোবন্তসিংহ পরাজয়ের অপমান এখনও বিস্মৃত হয়েন নাই, তিনিও সসৈনে বহির্গত হইলেন।

সাতাশ

 কয়েক দিবস ভ্রমণান্তর যশোবন্তসিংহের সেনা আগ্রা নগরে উপনীত হইল। আওরংজীবের পরাক্রম অসীম, তাঁহার সহিত সম্মুখযুদ্ধ করা যশোবন্তসিংহের সাধ্য নহে, তিনি সুযোগের জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। আওরংজীবের মিত্রবেশে পরম শত্রু আগ্রা নগরে প্রবেশ করিল।

 যমুনার অনন্ত সৌন্দর্য ও আগ্রা নগরের অপূর্ব শোভা দেখিয়া কে না বিমোহিত হইয়াছে। শ্বেতপ্রস্তর-বিনির্মিত, অপূর্ব চারুশিল্পখচিত, জগতের অতুল্য তাজমহল সন্ধ্যায় নীল-গগনে একটি প্রতিকৃতির ন্যায় বোধ হয়; তাহার চতুর্দিকে সুন্দর পথ,

৭৭