পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 শৈবলিনী। সকলের কপালে কি সকল সুখ থাকে? তিনি আমাকে বিধবা করিয়াছেন, কিন্তু দুঃখিনী করেন নাই। দেবতুল্য ভ্রাতা দিয়াছেন, তোমার ন্যায় সুশীলা ভ্রাতৃজায়া দিয়াছেন এই সোনার সংসারে স্থান দিয়াছেন। আমার আর কিছুই কামনা নাই, কেবল একবার তীর্থভ্রমণ করিয়া পূজা করিব, এই ইচ্ছা আছে।

 হেমলতা। আমাদের কাশী বৃন্দাবন যাওয়ার কথা স্থির হইয়াছিল না?

 শৈবলিনী। হ্যাঁ, শ্রীশ আমার উপরোধে সম্মত হইয়াছে, বোধ হয় শীঘ্রই যাওয়া হইবে।

 হেমলতা। দিদি, তোমার সঙ্গে তীর্থে যাইব, ভাবিলে আমার বড় আহ্লাদ হয়; কত দেশ দেখিব কত তীর্থ করিব। আর শুনিয়াছি নরেন্দ্র নাকি পশ্চিমে আছেন হয়ত তাঁহার সঙ্গেও দেখা হইবে।

 শৈবলিনী। হইতে পারে।

 এমন সময়ে শ্রীশচন্দ্র ঘরে প্রবেশ করিলেন। শৈবলিনী একপার্শ্ব দিয়া বাহির হইয়া যাইল। তাহার ললাট চিন্তাকুল।

 শৈবলিনীর কি চিন্তা? বাহিরে দণ্ডায়মান হইয়া শৈবলিনী ভাবিতেছিল, “হেম! তুমি আমাকে বিধবা ভাবিয়া অভাগিনী বল, কিন্তু নারীতে যাহা কখনও সহ্য করিতে পারে না, বালিকা! তুমি তাহা সহ্য করিয়াছ। সে আঘাতে তোমার হৃদয় চূর্ণ হইয়াছে, তোমার জীবন শুদ্ধ হইয়াছে, এ বয়সে তোমার দুর্বল শরীর ও নীরস ওষ্ঠ দেখিলে হৃদয় বিদীর্ণ হয়। এ বিষম চিন্তার কথা ভ্রাতা কিছুই জানে না, তুমি বালিকা, তুমিও ভাবিয়াছ, এ চিন্তা নির্বাপিত হইয়াছে, কিন্তু নরেন্দ্রের সহিত আবার সাক্ষাৎ হইলে কি হয় জানি না। ভগবান অনাথার নাথ, অসহায়ের সহায় হইবেন।

ত্রিশ

 শৈবলিনী পুনরায় ঘরের ভিতর আসিল ও ভ্রাতাকে আসন দিয়া ভোজনে বসাইয়া, আপনি পার্শ্বে বসিয়া ব্যজন করিতে লাগিল। হেমলতা সে ঘর হইতে বাহির হইয়া দ্বারের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া স্বামীর ভোজন দেখিতে লাগিল।

 ভ্রাতা-ভগিনীতে অনেকক্ষণ কথোপকথন হইতে লাগিল। অবশেষে শ্রীশচন্দ্রের খাওয়া সাঙ্গ হইল। রাত্রি অধিক হওয়ায় তিনি শয়নের উদ্যোগ করিলেন, শৈবলিনী অন্য গৃহে গেল।

 তখন হেমলতা ধীরে ধীরে স্বামীর পার্শ্বে আসিল ও বিনীতভাবে তাম্বুল দিল।

৯০