পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

চোখা, কিন্তু স্বভাবটি ফাঁকিবাজ। মুখে মামা যত বলে, কাজে হয়তো তার খানিকটা করিতে পারে, কিন্তু কিছু না করাই তাহার অভ্যাস। কোনো বিষয়ে মামার নিয়ম নাই, শৃঙ্খলা নাই। পদ্ধতির মধ্যে মামা হাঁপাইয়া ওঠে। গা লাগাইয়া কোনো কাজ করা মামার অসাধ্য, আরম্ভ করিয়া ছাড়িয়া দেয়। নকুড়বাবু ইনসিওরেন্স বেচিয়া খান, তাকে বলিয়া কহিয়া শ্যামা মামাকে একটা এজেন্সী দিয়াছিল, মামারও প্রথমটা খুব উৎসাহ দেখা গিয়াছিল, কিন্তু দুদিন দু-একজন লোকের কাছে যাতায়াত করিয়াই মামার ধৈর্য ভাঙ্গিয়া গেল, বলিল, এতে কিছু হবে না শ্যামা, আমাদের সঙ্গে সঙ্গে টাকার দরকার, লোককে ভজিয়ে ভাজিয়ে ইনসিওর করিয়ে পয়সার মুখ দেখা দুদিনের কম্ম নয় বাবু, আমার ওসব পোষাবে না। দোকান দেব একটা।

 শ্যামা বলিল — দোকান দেবার টাকা কই মামা?

 মামা রহস্যময় হাসি হাসিয়া বলিল — থাম না তুই, দেখ না আমি কি করি।

 শ্যামা সন্দিগ্ধ হইয়া বলিল — আমার সে হাজার টাকায় যেন হাত দিও না মামা।

 মামা বলিল — ক্ষেপেছিস শ্যামা তোর সে টাকা তেমনি পুলিন্দে করা আছে।

 সকালে উঠিয়া মামা কোথায় চলিয়া যায়, শ্যামা ভাবে রোজগারের সন্ধানে বাহির হইয়াছে। শহরে গিয়া মামা এদিক-ওদিক ঘোরে, কোথাও ভিড় দেখিলে দাঁড়ায় সঙের মতো বেশ করিয়া আধা ঘণ্টা ধরিয়া দুটি একটি সহজ ম্যাজিক দেখাইয়া যাহারা অষ্টধাতুর মাদুলি, বিষ-তাড়ানো, ভূত-তাড়ানো শিকড় বিক্রয় করে, ধৈর্য সহকারে মামা গোড়া হইতে শেষ পর্যন্ত তাহদের লক্ষ্য করে। ফুটপাতে যে সব জ্যোতিষী বসিয়া থাকে তাদের সঙ্গে মামা আলাপ করে। কোনোদিন সে স্টেশনে যায়, কোনোদিন গঙ্গার ঘাটে, কোনোদিন কালীঘাটে। যে সব ছন্নছাড়া ভবঘুরে মানুষ মানুষকে ফাঁকি দিয়া জীবিকা অর্জন করিয়া বেড়ায়, দেখিতে দেখিতে তাদের সঙ্গে মামা ভাব জমাইয়া ফেলে, সুখ-দুঃখের কত কথা হয়। সাধু নিশ্বাস ফেলিয়া বলে, শহরে যেমন জাঁকজমক, রোজগারের সুবিধা তেমন নয়, বড় বেয়াড়া শহরের লোকগুলি, মফস্বলের যাহারা শহরে আসে, শহরে পা দিয়া তারাও যেন চালাক হইয়া ওঠে,— নাঃ, শহরে সুখ নাই। মামা বলে, গ্যাঁট হয়ে বসে থাকলে কি শহরে সাধুর পয়সা আছে দাদা, যাও না শিশিতে জল পূৱে ধাতুদৌর্বল্যের ওষুধ বেচ না গিয়ে, যত ফেনা কাটবে মুখে, তত বিক্রি।

১১০