পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

প্রয়াগে কুম্ভমেলায় গিয়ে হাজার হাজার ছাইমাখা সন্ন্যাসীর মধ্যে গেরুয়া কাপড়টি শুধু পরে গায় একটা কুর্ত চাপিয়ে একধারে বসে আছি, না একরতি ভস্ম, না একটা রুদ্রাক্ষ, জটাফটা তো কম্মিন্ কালে রাখি নে— ওই,— অত সাধুর মধ্যে লাখোপতি মানুষটা করলে কি, অবাক হয়ে খানিক আমায় দেখলে, দেখে সটান এসে লুটিয়ে পড়ল পায়ে। বলল, বাবা এত ঝুটা মালের মধ্যে তুমি সাচ্চা সাধু, তোমার ভড়ং নেই, অনুমতি দাও সাধু সেবা করি।... মামা অকৃত্রিম আত্মপ্রসাদে চোখ বুজিয়া মৃদু মৃদু হাসে।

 শ্যামা বলে, তা যদি বল মামা, এখনো তোমার মুখে চোখে যেন জ্যোতি ফোটে মাঝে মাঝে। কিছু পেয়েছিলে মামা, সাধনার গোড়ার দিকে সাধুরা যা পায় টায়, ক্ষেমতা না কি বলে কে জানে বাবু— তাই কিছু?

 মামা নিশ্বাস ফেলিয়া বলে — পাই নি? ছেড়েছুড়ে দিলাম বলে, লেগে যদি থাকতাম শ্যামা—।

 দোকান করার টাকাটা তবে ভক্তই দিয়াছে? শ্যামার সেই হাজার টাকায় হাত পড়ে নাই? শ্যামার মন খুঁতখুঁত করে। কুড়ি বছর অদৃশ্য থাকিবার রহস্য আবরণটি একসঙ্গে বাস করিতে করিতে মামার চারিদিক হইতে খসিয়া পড়িতেছিল, শ্যামা যেন টেৱ পাইতেছিল। দীর্ঘকাল দেশবিদেশে ঘুরিলেই মানুষের কতগুলি অপার্থিব গুণের সঞ্চার হয় না, একটু হয়তো খাপছাড়া স্বভাব হইয়া যায় তার বেশি আর কিছু নয়, বিনা সঞ্চয়ে ঘুরিয়া বেড়ানো ছাড়া হয়তো এসব লোকের দ্বারা আর কোনো কাজ হয় না। মামা যে এমন একটি ভক্তকে বাগাইয়া রাখিয়াছে চাহিলেই যে দু-চারশ টাকা দান করিয়া বসে, শ্যামার তাহা বিশ্বাস করিতে অসুবিধা হয়। তেমন জবরদস্ত লোক তো মামা নয়?

 একদিন সন্ধ্যার পর চাদরে গা ঢাকিয়া শ্যামা দোকান দেখিয়া আসিল। দোকান চলিবে ভরসা হইল না। শ্যামা স্টোর্সের সামনে রাস্তাৱ ওপারে মস্ত মনোহারি দোকান, চার-পাঁচটা বিদ্যুতের আলো, টিমটিমে কেরাসিনের আলো-জ্বালা মামার অতটুকু দোকানে কে জিনিস কিনিতে আসিবে? মামার যেমন কাণ্ড, দোকান দিবার আর জায়গা পাইল না।

 মামার উৎসাহের অন্ত নাই, বিধান ও খুকী দোকান দোকান করিয়া পাগল, মণিরও দুবেলা দোকানে যাওয়া চাই। মামা ওদের বিস্কুট ও লজেঞ্জুস দেয়,

১১৪