দোকানের আকর্ষণ ওদের কাছে তাহাতে আরও বাড়িয়া গিয়াছে। জিনিস বিক্রয় করিবার শখ বিধানের প্রচণ্ড। বলে — এবার যে খদ্দের আসবে তাকে আমি জিনিস দেব দাদু, এ্যাঁ?
মামা বলে, পারবি কি খোকা, খদ্দের বিগড়ে দিবি শেষে! কিন্তু অনুমতি মামা দেয়।
বিধান ছোট শো-কেসটির পিছনে টুলটার উপরে গম্ভীর মুখে বসে, মামা কোণের বেঞ্চিটার উপর বসিয়া চশমা চোখে দিয়া বিড়ি টানিতে টানিতে খবরের কাগজ পড়ে। ক্রেতা যে আসে হয়তো সে পাড়ার ছেলে, ঈর্ষার দৃষ্টিতে বিধানের দিকে চাহিয়া বলে, কি রে বিধু!—
বিধান বলে — কি চাই?... সে পাকা দোকানি, কেনা-বেচার সময় তার সঙ্গে বন্ধুত্ব অচল, খোশ গল্প করিবার তার সময় কই? চশমার ফাঁক দিয়া মামা সহকারীর কার্যকলাপ চাহিয়া দেখে, বলে — কালি? ওই ও কোণার টিনের কৌটোতে—দু বড়ি এক পয়সায়, কাগজে মুড়ে দে খোকা!
এদিকে দোকান চলে ওদিকে মামা আজ দশ টাকা কাল পাঁচ টাকা সংসার খরচ আনিয়া দেয়। মামার চারিদিকে রহস্যের ভাঙা আবরণটি আবার যেন গড়িয়া উঠিতে থাকে! পাড়ার লোকে এতকাল মামাকে অতিথি বলিয়া খাতির করিত, এখন প্রতিবেশী গৃহস্থের প্রাপ্য সহজ সমাদর দেয়, তবে অতটুকু দোকান দেওয়ার জন্য পাড়ার অনেক চাকুরে-বাবুর কাছে মামার আসন নামিয়া গিয়াছে, খুব যারা বাবু দু-এক পয়সার জিনিস কিনিতে মামাকে তাদের কেহ ‘তুমি’ পর্যন্ত বলিয়া বসে।
মামা বলে — কি চাই বললে? পরিমল নস্যি? ওই ও দোকানে যাও!
অপমান করিয়া মামার কাছে কারো পার পাওয়ার জো নাই।
বৈশাখ মাস শেষ হইলে শ্যামা একদিন বলিল — দোকানের হিসাবপত্র করলে মামা, লাভ-টাভ হল?
মামা বলিল — লাভ কিরে শ্যামা, বসতে না বসতে কি লাভ হয়? খরচ উঠুক আগে।
শ্যামা বলিল — নতুন দোকান দিয়ে বসার খরচ দু-এক মাসে উঠবে না তা জানি মামা, তা বলি নি, বিক্রির ওপর লাভ-টাভ কি রকম হল হিসাব কর নি?—