পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ‘হারাণের নাতজামাই’। এ গল্প শিল্পের অপমৃত্যু। আশ্চর্য মনে হয় মানিকবাবুর মানুষেরা এত সহজ ভোঁতা স্বাতন্ত্র্যহীন। ময়নার মার নৈতিক বিপ্লবী মনও তাৎপর্যহীন - কারণ এ দুঃসাহস শ্রেণীস্বভাব। শ্রেণীসংগ্রাম গরীব চাষীর নৈতিক ভাবনায়ও রাতারাতি বিপ্লব ঘটিয়েছে। জগমোহনের আচরণের আকস্মিক পরিবর্তন ছক ধরে এগিয়েছে বলে সত্যের বিভ্রম নেই। এ গল্পের মানুষ ইসতেহারের ভাষা শুধু।

 ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী।’ উত্তর পর্বের এ-ধরণের শিল্পসিদ্ধ রচনা অল্প। চরিত্র ভাবনায় এখানেও ব্যক্তির আভ্যন্তর জটিলতা প্রশ্রয় পায় নি। ঘটনায় নয়, বিন্যাসে প্রসঙ্গ ছাপিয়ে একটা সূক্ষ্ম রুচিবোধ ইঙ্গিতময় হয়ে উঠেছে। সে ইঙ্গিত মানবজীবনের গূঢ় মহলের অভিমুখি নয়। তবুও শ্রেণীস্বভাবের বিপরীত বৈচিত্র্যে এ গল্প অভিনব - বিশেষত তা শব্দার্থে নয় ছবির রঙের ভাষায় প্রকাশিত বলেই। বহু অস্ত্রে উদ্যত গার্ডদের ত্রস্ত গোপন ভীতিও দিবাকর-আত্মার সহজ স্বস্তিৱ সংঘাতে এ গল্পে রস জমেছে। সমাপ্তির ব্যঙ্গে, অবিশিষ্ট দিবাকরকে ঘিরে মনুষ্যমহিমাৱ যে জয়ধ্বনি উঠেছে তা শিল্পসার্থক। কারণ, লেখকের অভিপ্রায় এখানে গল্পস্বভাবের অঙ্গ।

ক্ষেত্র গুপ্ত
অধ্যাপক
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
কলিকাতা।