পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

धनौ যায়। মোটরগাড়ী, দামী আসবাব, গৃহের রমণীবৃন্দের বিলাসিতার উপকরণ-গ্ৰাম্য গৃহস্থের ধনবত্তার পরিচয় নয়, তাহদের অবস্থাকে ঘোষণা করে পোষ্যের সংখ্যা, ধানের মরাই, খাতকের ভিড় । রাখালের তিনটি জোড়া তক্তপোষ সকালবেলা খাতকের ভিড়ে ভরিয়া যায়। দেখিয়া শুনিয়া শুJামা নিশ্বাস ফেলিল । রাগ ও বিদ্বেষ এবার যেন তাহাদেৱ হইল না, অনেক অভিজ্ঞতা দিয়া শ্যামা এখন বুঝিতে পারিয়াছে রাখাল এক নয়, এমনি জগৎ । এমন করিয়া মিথ্যা বলিতে না জানিলে, ছল ও প্ৰবঞ্চনায় এমন দক্ষতা না জন্মিলে, সকালে উঠিয়া দশ-বিশটি খাতকের মুখ দেখিবার সৌভাগ্য মানুষের হয় না । রাখালের দোষ নাই। মানুষের মাঝে মানুষের মতো মাথা উচু করিবার একটিমাত্র যে পন্থা আছে তাই সে বাছিয়া নিয়াছে। রাখাল তো ধর্মযাজক নয়, বিবাগী সন্ন্যাসী নয়, সে সংসারী মানুষ । সংসারে দশজনে যে ভাবে আত্মোন্নতি করে সেও তেমনি ভাবে অর্থসম্পদ সঞ্চয়ংকরিয়াছে ! শ্যামা সব জানে। বড়লোক হইবার সমস্ত কলা-কৌশল। কেবল স্ত্রীলোক করিয়া ভগবান তাহকে মারিয়া রাখিয়াছেন । রাখালের দ্বিতীয় পক্ষের বৌ সুপ্রভাকে দেখিয়া প্ৰথমে শুমা চোখ ফিরাইতে পারে নাই । রাখালের দুবার বিবাহ করার কারণটাও তখন সে বুঝিতে পারিয়াছিল। এত রূপ দেখিলে মাথার ঠিক থাকে পুরুষ মানুষের। একটি ছেলে আর একটি মেয়ে হইয়াছে সুপ্ৰভাৱ; শুমা আসিবার আগে সে নাকি অয়েকদিন অসুখেও ভুগিয়াছিল, তবু এখনও সে ছবির মতো, প্ৰতিমার মতো সুন্দৰী । এমন সতীন থাকিতে মন্দা যে কেমন করিয়া এখানে গৃহিণীর পদটি অধিকার করিয়া আছে, চারিদিকে সকলকে হুকুম দিয়া বেড়াইতেছে-সুপ্ৰভাকে পর্যন্ত, ভাবিয়া প্রথমটা শ্যামা আশ্চৰ্য হইয়া গিয়াছিল। তারপর সে টের পাইয়াছে যতই রূপ থাক সুপ্ৰভাৱ বুদ্ধি নাই, বড় সে বোকা । পুতুলের মতো সে পরের হাতে নড়ে-চড়ে, সাহস করিয়া যে তাহার উপর কতৃত্ব করিতে যায়। তারই কতৃত্ব স্বীকার করে, একেবারে সে মাটির মানুষ, ঘোরপ্যাচ বোঝে না, নিজের পাওনা গণ্ডা বুঝিয়া লইতে জানে না। তবু রাখাল কিনা আজও ছোটবেী বলিতে অজ্ঞান, মনে মনে সকলেই সুপ্ৰভাকে ভয় করে, এ বাড়িতে আদরের তাহার সীমা নাই। সুপ্ৰভা প্ৰভুত্ব করার চেয়ে নির্ভর করিতেই ভালবাসে বেশি, bob