পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী আনিয়াছিল গোপনে সে কি দু-একবিন্দু অশ্রুপাত করে নাই ? বাড়ি ভাড়ার কুড়িটা টাকা নিয়মিত আসে। দুমাস টাকা পাঠাইয়া কনক একবার শ্যামাকে একখানা পত্র লিখিল। পাশে কোনো বাড়িতে বিদ্যুতের আলো নেওয়া হইতেছে, দেখিয়া কনকের সখ জাগিয়াছে তারও বিদ্যুতের আলো চাই । বাড়িটা তাদের পছন্দ হইয়াছে, স্থায়িভাবে তারা ওখানে রহিয়া গেল, এক কাজ করলে হয় না দিদি ? খরচপত্র করিয়া তারা বিদ্যুৎ আনাক, মাসে মাসে বাড়ি ভাড়ার টাকায় সেটা শোধ হইবে ? এই পত্ৰ পাইয়া শ্যামা বড় চিন্তায় পড়িয়া গেল। এখানে তাহার নানা রকম খরচ আছে, স্কুলের মাহিনী, জামাকাপড় এসব তাহাকেই দিতে হয়, এটা ওটা খুচরা খরচও আছে অনেক, বাড়িভাড়ার টাকা না আসিলে সে করিবে” কি ? অথচ বিদ্যুৎ আনিতে না দিলে ওরা যদি অন্য বাড়িতে উঠিয়া যায় ? সঙ্গে সঙ্গে আবার কি ভাড়াটে মিলিবে ? শেষে শ্যামা মিনতি করিয়া কনককে চিঠি লিখিল । লিখিল, ওই কুড়িটা টাকা তাহার সম্বল, ওই টাকা ক’টির জোরে সে পরের বাড়ি পড়িয়া আছে, বাড়িতে বিদ্যুৎ আনিবার তার ক্ষমতা কই ? শ্যাম যে কি দুঃখে পড়িয়াছে কনক যদি তাহা জানিত-- এ চিঠি ডাকে দিবারও প্রয়োজন হইল না, কনকলতার স্বামীর নিকট হইতে সবিনয় নিবেদন ভণিতার আর একখানা পত্ৰ আসিল, শ্যামার বাড়ি হইতে অ্যাপিসে যাতায়াত করা বড়ই অসুবিধা, একটি ভাল বাড়ি পাওয়া গিয়াছে শহরের মধ্যে, ইংরাজী মাসটা কাবার হইলে তাহারা উঠিয়া যাইবে । কলিকাতার কেরানী-ভাড়াটের বাসা-বদলানো রোগের খবর তো শ্যাম জনিত না, তাহার মুখ শুকাইয়া গেল। কনকলতার উপর রাগ ও অভিমানের তাহার সীমা রহিল না । শ্যামার সঙ্গে না তাহার অত ভাব হইয়াছিল, দুঃখের কথা বলিতে বলিতে শ্যামার চোখে জল আসিলে সে না। সাস্তুনা দিয়া বলিত, ভেবে না। দিদি, ভগবান মুখ তুলে চাইবেন ? --শ্যামা কত নিরুপায় সে তাহ জানে, কলিকাতায় বাড়িভাড়া করিয়াই সে থাকিবে তবু শ্যামার বাড়িতে থাকিবে না । এতকাল অসুবিধা ছিল না, আজ হঠাৎ অসুবিধা হইয়া গেল ? রাখালকে চিঠিখানা দেখাইয়া শ্যামা বলিল, ঠাকুরজামাই এবার কি হবে ? কুড়িটে করে টাকা পাচ্ছিলাম, ভগবান তাতেও বাদ সাধলেন।