পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जैनंबौ শঙ্কর বলে-ভাড়াটে কই, কেউ আসে নি তো ? সদর দরজায় তালা বন্ধ । শ্যামা হাসিল—তুমি জান না। শঙ্কর-এক মাসের ওপর ভাড়াটে এসেছে, পচিশ টাকা ভাড়া দিয়েছে,-ওদিকে তুমি যাও নি কখনো । শঙ্কর বলে-না মাসিম, আপনাদের বাড়ি খালি পড়ে আছে, কেউ নেই বাড়িতে। জানলা কপাট বন্ধ, সামনে বাড়িভাড়ার নোটিশ ঝুলছে-আমি কদিন দেখেছি । শ্যামা অবাক হইয়া বলে—তবে কি ভাড়াটে উঠে গেল ? --আপনি যাদের ভাড়া দিয়েছিলেন তারা যাবার পর কেউ আসে নি। মাসিমা । আমি যাই যে মাঝে মাঝে নকুড়বাবুর বাড়ি, আমি জানি নে ?-- শঙ্কর হাসে, ভাড়াটে এলে কি বাইরে তালা দিয়ে লুকিয়ে থাকত ? হারান তবে ছুতা করিয়া তাহাকে অর্থ-সাহায্য করিতেছে ? হারানের কাছে কোনোদিন টাকা সে চাহে নাই, কেবল ভাড়াটে উঠিয়া যাওয়া উপলক্ষে হারানকে সেই যে সে চিঠি লিখিয়াছিল, সেই চিঠিতে দুঃখের কঁাদুনি গাহিয়াছিল অনেক । তাই পড়িয়া হারান তাহাকে পচিশ টকা পাঠাইয়া দিয়াছে, যতদিন বাড়িতে তাহার ভাড়াটে না আসে, মাসে মাসে নিজেই তাহাকে এই টাকাটা দেওয়া ঠিক করিয়াছে হারান ? সংসারে আত্মীয় পর সত্যই চেনা যায় না । শ্যামা কে হারানের ? শ্যামার মতো দুঃখিনীর সংশ্রবে। হারানকে সর্বদা আসিতে হয়, শ্যামার জন্য এত তার মমতা হইল কেন ? তিন দিন পরে শঙ্কর কলিকাতা চলিয়া গেল। এই তিন দিন সে ভাল করিয়া হঁটিতে পাৱে নাই, ঘরের মধ্যে সে বন্দী হইয়া থাকিয়াছে। মজা হইয়াছে বকুলের। বাড়ির ছেলেরা বাহিরে চলিয়া গেলে একা সে শঙ্করকে দখল করিতে পারিয়াছে। শঙ্কর চলিয়া গেলে ক’দিন বকুল মনমরা হইয়া রহিল। তিন-চারদিন পরে হারানের মনিঅৰ্ডার অ্যাসিল । সই করিয়া টাকা নেওয়ার সময় শ্যামার মনে হইল গভীর ও গোপন একটি মমতা দূর হইতে তাহার মঙ্গল কামনা করিতেছে, স্বার্থ ও বিদ্বেষ ভরা এই জগতে যার তুলনা নাই। দুঃখের দিনে কোথায় রহিল সেই বিষ্ণুপ্রিয়া, স্বামীর পাপের ছাপ-মারা সন্তান গর্ভে লইয়া একদিন যে ভিখারিণীর মতো জননী শুষ্ঠামার সখ্য চাহিয়াছিল ? যাৱ এক মাসের পেট্রোল খরচ পাইলে সন্তানসহ শ্যামা দুমাস বঁাচিয়া থাকিতে পারিত ? SS