পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বা কিসের ? আত্মীয়স্বজনকে মুখ কি দেখাইতে হইবে না। শনিবারের আগে রাখালের কলিকাতা যাওয়ার উপায় ছিল না । দু দিন ধরিয়া শ্যামা তাহার দুর্ভাগ্য স্বামীর কথা ভাবিল। ভাবিতে ভাবিতে আসিল NNT) | শ্যামা কি জানিত নকুড়বাবুর চিঠির কথাগুলি যে ছবি তাহার মনে আঁকিয়া দিয়াছিল। পরীক্ষায় ব্যস্ত সন্তানের মুখের দিকে চাহিয়া থাকিবার সময়ও তাহা সে ভুলিতে পরিবে না, এত সে গভীর বিষাদ বোধ করিবে ? শনিবার রাখালের সঙ্গে সে কলিকাতা রওনা হইল। সঙ্গে লইল শুধু ফণীকে। বিধানকে বলিয়া গেল সে বাড়িটা দেখিয়া আসিতে যাইতেছে, কলি ফেরানোর ব্যবস্থা করিয়া আসিবে, যদি কোনো মেরামতের দরকার থাকে তাও করিয়া আসিবে । -আমার কথা ভেবো না বাবা, ভাল করে পরীক্ষা দিও, কেমন ? ছোট পিসীর কাছে খাবার চেয়ে খেও ? আর বকুলকে যেন মেরো না খোকা । বাড়ি পৌছিতে সন্ধ্যা পার হইয়া গেল। সদর দরজা বন্ধ, ভিতরে আলো জ্বলিতেছে কিনা বোঝা যায় না, শীতের রাত্রে সমস্ত পাড়াটাই স্তব্ধ হইয়া আছে, তার মধ্যে শ্যামার বাড়িটা যেন আরও নিঝুম । অনেকক্ষণ দরজা ঠেলা ঠেলির পর শীতল আসিয়া দরজা খুলিল। রাস্তার আলোতে তাকে দেখিয়া শ্যামা কঁাদিয়া ফেলিল। চোখ মুছিয়া ভিতরে ঢুকিয়া সে দেখিল চারিদিকে অন্ধকার, একটা আলোও কি শীতল জালায় না। সন্ধ্যার পর ? ফণী ভয়ে তাহাকে সবলে অ্যাকড়াইয়া ধরিয়াছিল, অন্ধকার বারান্দায় দাড়াইয়া শ্যাম শিহরিয়া উঠিল । এমনি সন্ধ্যাবেলা একদিন সে এখানে প্ৰথম স্বামীর ঘর করিতে আসিয়াছিল, সেদিনও এমনি ছাড়াবাড়ির আবহাওয়া তাহার নিশ্বাস রোধ করিয়া দিতেছিল, সেদিনও তাহার কান্না আসিতেছিল এমনি ভাবে। শুধু, সেদিন বারান্দায় জ্বালানো ছিল টিমটিমে একটা লণ্ঠন ৷ শীতল বিড় বিড় করিয়া বলিল-মোমবাতি ছিল, সব খরচ হয়ে গেছে । রাখাল গিয়া মোড়ের দোকান হইতে কতকগুলি মোমবাতি কিনিয়া আনিল । এই অবসরে শ্যামা হাতড়াইয়া হাতড়াইয়া ঘরে গিয়া বসিয়াছে, বাহিরে বড় ঠাণ্ড । Y3. p