পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী শীতলকে দুটো একটা কথাও সে জিজ্ঞাসা করিয়াছে, প্ৰায় অবান্তর কথা, জ্ঞাতব্য প্রশ্ন করিতে কি জানি শ্যামার কেন ভয় করিতেছিল। ভিতরে ঢুকিবার আগে রাস্তার আলোতে শীতলের পাগলের মতো মূৰ্তি দেখিয়া শ্যাম তো কঁাদিয়াছিল, অন্ধকার ঘরে সে বেদনা কি ভয়ে পরিণত হইয়াছে? রাখাল ফিরিয়া আসিয়া একটা মোমবাতি জালিয়া জানালায় বসাইয়া দিল । ঘরে কিছু নাই, তক্তপোষের উপর শুধু একটা মাদুর পাতা, আর ময়লা একটা বালিশ। মেঝেতে একরাশ পোড়া বিড়ি আর কতকগুলি শালপাতা ছড়ানো } যে জামাকাপড়ে দু বছর আগে শীতল রাত দুপুরে পুলিসের সঙ্গে চলিয়া গিয়াছিল। তাই সে পরিয়া আছে, কাপড় বোধ হয় তাহার ওই একখানা, কি যে ময়লা হইয়াছে বলিবার নয়, রাত্ৰে বোধ হয় সে শুধু আলোয়ানটা মুড়ি দিয়া পড়িয়া থাকে, চৌকির বাহিরে অর্ধেকটা এখন মাটিতে লুটাইতেছে। এসব তবুও যেন চাহিয়া দেখা যায়, তাকানো যায় না। শীতলের মুখের দিকে। চোখ উঠিয়া, মুখ ফুলিয়া বীভৎস দেখাইতেছে তাহাকে, হাড় ক’খানা ছাড়া শরীরে বোধ হয় কিছু নাই । শীতল দাড়াইয়া থাকে, দাড়াইয়া দাড়াইয়া সে কঁপে। তারপর সহসা শ্যামার কি হয় কে জানে, ফণীকে জোর করিয়া নামাইয়া দিয়া জননীর মতো ব্যাকুল আবেগে শীতলকে জড়াইয়া ধরিয়া টানিয়া আনে, শিশুর মতো আলগোছে শোয়াইয়া দেয় মাদুরে, বলে—এমন করে ভূগছ, আমাকে একটা খপরও তুমি দিলে না গো | পরদিন সকালে সে হারান ডাক্তারকে ডাকিয়া পাঠাইল । হারানকে খবর দিলে পচিশ টাকা বাড়িভাড়া পাঠানোর ছলনাটুকু যে ঘুচিয়া যাইবে শ্যামা কি তা ভাবিয়া দেখিল না । ভাবিল বৈকি। রাত্ৰে কথাটা মনে মনে নাড়াচাড়া করিয়া সে দেখিয়াছে, হারানের মহৎ ছলনাকে বঁাচাইয়া রাখার জন্য হারানকে তার ছলনা করা উচিত নয়। সে যে এখানে আসিয়া জানিতে পারিয়াছে বাড়িতে তাহার ভাড়াটে আসে নাই, হারান। দয়া করিয়া মাসে মাসে তাকে টাকা পাঠায়—এটা হারানকে জানিতে দেওয়াই ভাল। পরে যদি হাৱান জানিতে পারে শ্যাম কলিকাতা আসিয়াছিল ? তখন কি হইবে ? হারান কি তখন মনে করিবে না যে সব জানিয়াও টাকার লোভে শ্যামা চুপ করিয়া আছে ? হারান আসিলে শ্যাম তাহাকে প্ৰণাম করিল। বলিল-ভাল আছেন 989)