পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী করিতেছে, যেখানে যেখানে মেয়ের একত্র হইয়াছে বকুল তো সেখানে নাই ? হাতের কাজ ফেলিয়া রাখিয়া শ্যামা এখানে খোজে। ওখানে খোজে, একে তাকে জিজ্ঞাসা করে । একজন বলিল, এই তো দেখলাম। এখানে খানিক আগে, দেখ না কলাবাগানে গেছে নাকি ? বাড়ির পিছনে কলাবাগান, কলাবাগানে সেই ঢেকিঘর। তাই বটে, টেকিঘরে টেকিটার উপর বসিয়া শঙ্কর আর বকুল কথা বলিতেছে বটে। ঘরের কোণে এখানে বকুল আর এখন পুতুল খেলা করে না, খেলাঘর তারা ভাঙিয়া গেছে, শুধু আছে চিহ্ন, কত বার ঘর লেপা হইয়াছে। আজো চারিদিকে উচু আলোর চিহ্ন, পুকুরের গর্ত মিলাইয়া যায় নাই, বেড়ায় যে শিউলিবোঁটার রঙে ছোপানো ন্যাকড়টি গোঁজা আছে সে তো বকুলের পুতুলেরই জামা । পুতুল খেলার ঘরে কি ছেলেখেলা আজি করিতেছে বকুল ? একটু বাড়াবাড়ি রকম কাছাকাছি বসিয়া আছে ওরা, আর কিছু নয়। না, বকুলের হাতটিও শঙ্করের হাতে ধরা নাই। শ্যামা বলিয়াছিল-ও বকুল, এখানে বসে আছিস তুই ? মেয়ে-জামাই যাবে যে এখন, আয়, চলে আয়। বকুল তো আসিল, কিন্তু মেয়ের মুখ রাঙা কেন, চোখ কেন ছিলো ছলে ?-শঙ্কর আসিয়াছে চার-পাচদিন, সকলের সামনে শঙ্করের সঙ্গে কত কথা বকুল বলিয়াছে, দু-চার মিনিট এক কথা বলিবার সময়ও কতবার শ্যামা হঠাৎ আসিয়া ওদের দেখিয়াছে, শ্যামাকে দেখিয়াও কথা শঙ্কর বন্ধ করে নাই, বকুল হাসি থামায় নাই। ঢেকি-ঘরে আজ ওরা কোন নিষিদ্ধ বাণীর আদানপ্ৰদান করিতেছিল, বিকলের মুখে যা রঙ আনিয়াছে, চােখে আনিয়াছে জল ? কি বলিতেছিল শঙ্কর বকলকে ? শ্যামা একবার ভাবিয়াছিল বকলকে জিজ্ঞাসা করিবে। শেষে কিছু না বলাই ভাল মনে করিয়াছিল। কিছুই হয়তো নয়। হয়তো নির্জন ঢেকি-ঘরে শঙ্করের কাছে বসিয়া থাকার জন্যই বকুল লজ্জা পাইয়াছিল, ওখানে ও ভাবে বসিয়া থাকা যে তার উচিত হয় নাই, বকুল কি আর তা বোঝে না। তারপর যে ক'দিন শঙ্কর এখানে ছিল, আর তিনটি দিন মাত্র, বকুলকে }ামা একাদণ্ডের জন্য চোখের আড়াল করে নাই । বকুল রাগ করিয়া বলিয়াছিল, সারাদিন পেছন পেছন ঘুরছে কেন বল তো ? )R