পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

C শ্যামার মনে আবার নিবিড় হইয়া আর্থিক দুর্ভাবনা ঘনাইয়া আসিয়াছে। এবার আর কোনোদিকে সে উপায় দেখিতে পায় না। আগে দুরবস্থায় পড়িয়া একটা ভরসা সে করিতে পারিত, বাড়িটা বিক্রয় করিয়া দিলে মোটা কিছু টাকা পাওয়া যাইবে । এখন সে ভরসাও নাই। বাড়ি বিক্রির অতগুলি টাকা কেমন করিয়া নিঃশেষ হইয়া গেল ? অপচয় করিয়াছে নাকি সে ? হয়তো আরও হিসাব করিয়া খরচ করা উচিত ছিল । এক সঙ্গে অনেকগুলি টাকা হাতে পাইয়া নিজেকে হয়তো সে বড়লোক ঠাওরাইয়াই বসিয়াছিল। তবে একথা সত্য যে এ ক’বছর একটি পয়সাও ঘরে আসে নাই। ফেঁটা ফোটা করিয়া ঢালিলেও কলসীর জল একদিন শেষ হইয়া যায়। বিধানের পড়ার খরচও কি সহজ। বকুলের বিবাহেও ঢের টাকা লাগিয়াছে। কিন্তু এখন উপায় ? শ্যামা এবার একটু মন দিয়া শীতলের ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করিতে লাগিল। খায় দায় তামাক টানিয়া তাস পাশা খেলিয়া দিন কাটায়, হঁটে একটু খোড়াইয়া, বদহজমে ভোগে, রাত্রে ভাল ঘুম হয় না। তবু কিছু কি শীতল করিতে পারে না ? ঘরে বসিয়া থাকিয়াই হয়তো সে একেবারে সারিয়া উঠিতে পারিতেছে না, কাজে কর্মে মন দিলে হয়তো সুস্থ হইবে। চুলে শীতলের পাক ধরিয়াছে। বিবৰ্ণ কপালের ঠিক উপরে একগোছা চুল একেবারে সাদা হইয়া গিয়াছে। না, বয়স শীতলের কম হয় নাই। বিবাহ সে বেশি বয়সেই করিয়াছিল, বয়স এখন ওর পঞ্চাশের কাছে গিয়াছে বৈকি। তবু, পঞ্চাশ বছর বয়সে পুরুষ মানুষ কি রোজগার . করে না ? হাৱান পয়ষট্টি বছর পর্যন্ত কত টাকা উপার্জন করিয়াছে, শীতল কি কিছু ঘরে আনিতে পারে না, যৎসামান্য ? পঞ্চাশটাকা অন্ততঃ ? আর কিছু হোক বা না হোক, বিধানের পড়ার খরচ তো দিতে হইবে। মৃদু মৃদু শীত পড়িয়াছে। কেঁচার খুটি গায়ে জড়াইয়া বাহিরের অঙ্গনের জাম গাছটার গোড়ায় বেতের মোড়াতে বসিয়া শীতল তামাক টানে। বাড়ির পোষা কুকুৰেটা পায়ের কাছে মুখ গুজিয়া চুপচাপ শুইয়া থাকে, মাঝে YVo?) 99