পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী রাগে বিভা গরগর করে। শ্যামা একটু অবাক হয়, এত রাগ কেন বিভাৱ ? কোথায় কোন কাপুরুষ যুবক ক্রীতদাসের জীবন যাপন করে খেয়াল করিয়া বিচলিত হওয়ার স্বভাব তো বিভাৱ নয় ! হঠাৎ বিভা করে কি, কুকিয়া ডাক দেয়,--বনুবাবু, মা আপনাকে ডাকছেন, উপরে আসবেন একবার ? বনবিহারী মুখ তুলিয়া তাকায়, বলে,-যাই। সে উঠিয়া আসিলে শ্যামাকে অবাক করিয়া দিয়া বিভা তাঁহাকে বকে। রীতিমত ধমকায়। বলে,-কি যে প্ৰবৃত্তি আপনার বুঝিনে কিছু, একেবারে আপনার ব্যাকুবোন নেই, সারাদিন ঘুরে এত রাত্রে ফিরে এলেন এখনও আপনাকে সংসারের কাজ করতে হবে ? কেন করেন। আপনি ? আমি হলে তো সবাইকে চুলোয় যেতে বলে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তাম, এত কি আহলাদ সকলের । বিনে মাইনের চাকর নাকি আপনি !—এমনি ভাবে কত কথাই যে বিভা তাহাকে বলে । বলে, সংসারে এমন নিরীহ হইয়া থাকিলে চলে না। একটু শক্ত হইতে হয়। অপদাৰ্থ জেলিফিশ তো নয় বনবিহারী ! বলিতে বলিতে এত রাগিয়া ওঠে বিভা যে হঠাৎ মুখ ঘুৱাইয়া গাঁটগট করিয়া সে ভিতরে চলিয়া যায়। মুখ নীচু করিয়া বনবিহারী নামে নীচে। শুষ্ঠামা দাড়াইয়া ভাবিতে থাকে যে বিভা অনেকদিন এখানে আছে, বনবিহারীর সঙ্গে পরিচয় তাহার অনেক দিনের, বিভার গায়ে পড়িয়া বাকবাকি করাটা যেমন বিসদৃশ শোনাইল আসলে হয়ত তা তেমন খাপছাড়া নয়। এখানে আসিয়া অল্পে অল্পে শ্যামার মন কিছু সুস্থ হইয়াছে। তবে শ্যামা আর সে শ্যামা নাই। বনগাঁয়ে হঠাৎ সে যেরকম শান্ত ও নির্বাক হইয়া গিয়াছিল, এখানেও সে প্রায় তেমনি হইয়া আছে, শুধু তার এই পরিবর্তন এখন আর অস্বাভাবিক মনে হয় না। আসন্ন সন্তান সম্ভাবনার সঙ্গে পরিবত্তনটুকু খাপ খাইয়া গিয়াছে। চলাফেরা কাজকর্ম সমস্তই তার ধীর মন্থর, সংসারটাকে ঠেলিয়া তুলিবার জন্য তার ধৈৰ্যহীন উৎসাহ আর নাই, নিজের সংসারে থাকিবার সময় সে একদিন ছেলেমেয়ের জামার ছাটটি পৰ্যন্ত ক্ৰমাগত উন্নততর করিতে না পারিলে স্বন্তি পাইত না, সংসারের তুচ্ছতম খুটিনাটি ব্যাপারগুলি পর্যন্ত তার কাছে ছিল গুরুতর, এখন সে শুধু মোটামুটি সংসারটা চালাইয়া যায়, ছোটখাট ত্রুটি ও ফাকি সে অবহেলা কৱে ।