পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী সন্ধ্যায় খনি-গান্ধী ধোয়া উড়াইয়া লইয়া যায়। এ বাড়ীতে অল্প যায়গায় যশোদা অনেকগুলি ঘর তুলিয়াছে, অনেকগুলি মানুষকে থাকিবার যায়গা দিতে হয়। আগে কেবল পাঁচটি ইটের ঘর ছিল, তখন উঠানটিও ছিল মস্ত বড়। পশ্চিম কোণে কল আর চৌবাচ্চার কাছে খানিকটা স্থান ছিল বঁধান, বাকীটা কঁচা । তার পর দু’টি টিনের ঘর তুলিবার ফলে উঠান তার এক রকম অদৃশ্য হইয়া গিয়াছে, আছে কেবল ওই বঁাধান স্থানটুকু। কয়েক বছর কাটিয়া গিয়াছে কিন্তু এখনও উঠানের সঙ্কীর্ণতা যশোদার অভ্যাস হইয়া যায় নাই, মাঝে মাঝে পীড়ন করে। দু’হাতে জলভরা প্ৰকাণ্ড দু’টি বালতি ঝুলাইয়া উঠানে দাড়াইয়া আকাশের দিকে মুখ করিয়া সশব্দে তাকে নিশ্বাস ফেলিতে দেখা গিয়াছে, ফাপর ফাপর লাগিলে • মানুষ যেমন করে। বোঝা গিয়াছে, ফাপর ফাপর লাগাটা যশোদার মানসিক, বালতি দু’টি ভারি বলিয়া নয়। এ-রকম দু-চারটি জলভরা বালতির ভারে কাবু হওয়ার মত শরীর যে যশোদারু নয়, দেখিলেই সেটা বোঝা যায়। সাধারণ বাঙালী ঘরের গোটা কয়েক পরম স্বাস্থ্যবতী যুবতীকে অনায়াসে গড়া চলিত এতখানি মালমসলা দিয়া ভগবান তাকে সৃষ্টি করিয়াছেন । নিজের বা নিজের ভাই-এর জন্য আজ এবেলা যশোদার উনানে আঁচ দিবার দরকার ছিল না, পাড়ায় বৌভাতের নিমন্ত্রণ আছে। কিন্তু আরও যে বিশ বাইশজন লোক বাড়ীতে আছে তাদের জন্য যশোদাকে রাধিতে হইল। এরা সকলেই ভাড়াটে এবং পোষ্য । কারণ অনেকে নিয়ম মত ভাড়াও দেয় না, ভরণপোষণের খরচও দেয় না-দিতে পারে না। এতগুলি লোককে উপবাসী রাখিয়া ভাইকে নিয়া কি নিমন্ত্রণ খাইতে যাওয়া চলে ? সকাল সকাল যশোদা ৱাল্লা শেষ করিয়া ফেলিল। বড় গরম পড়িয়াছে আজ। রাধিবার সময় ঘামে যশোদার ভালমতেই স্নান হইয়া গিয়াছিল, রান্না শেষ করিয়াই তবু একবার স্বান করিয়া নিল। শরীরের ঘাম না, শুকাইয়া স্নান করিলে অসুখ হয়, এসব যশোদা মানে না, আত তুচ্ছ কারণে অসুখ হইবে এমন শরীর যশোদার নয়। তাছাড়া, ঘাম ধুইয়া ফেলার জন্যই স্নান করা, ঘাম শরীরে বসিয়া গেলে আর স্বান করিয়া লাভ কি ? তখন সন্ধ্যা · পার হইয়া গিয়াছে। তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করার ব্যস্ততায় RS)