পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহয়তলী কাণ্ডজ্ঞান বাছা, বুঝিনে কিছু।” گھ পরেশ তবু হাসে, আরও বেশী সঙ্কোচ, আরও বেশী অপরাধভরা হাসি। মানুষের কাছে এই একটিমাত্র মুখভঙ্গি পরেশ করিতে জানে, তার বড় বড় টানা চোখ দু’টির খাপছাড়া সৌন্দৰ্য্যের মত এ মুখভঙ্গি অর্থহীন। ওদিকের কোণের ঘরে নদের চাদের বৌ অনেকদিন জ্বরে ভূগিতেছে। তার খবরটা জানিবার জন্য যশোদা পা সবে বাড়াইয়াছে, কলতলায় এক কাণ্ড হইয়া গেল। জগতের বোন কালো একটু স্থান করিয়া বাসন মাজিতেছিল, কোথা হইতে নদের চাদের মেয়ে চাপা আসিয়া তাকে ধাক্কা দিয়া সরাইয়া দিয়া নিজে সেখানে বসিয়া পড়িল । “আমি আগে বাসন রেখে গেছি।” কালো মুখ কালো করিয়া বলিল, “ধাক্কা দিলে কেন ? মুখে বলতে পারতে না ? কালোর স্বাস্থ্য ভাল, চাপার মত সে রোগ নয়। কিন্তু সহরতলীতে সে আসিয়াছে অল্পদিন আগে দেশের গ্য হইতে, এখনো সহরতলীর সহরে মেয়েদের সঙ্গে কলতলার যুদ্ধে আঁটিয়া উঠিতে পারে না। মুখ ভার করিয়া সে একপাশে দাড়াইয়া রহিল। বাসন মাজিতে আরম্ভ করিয়া চাপা মুখ ফিরাইয়া বলিল, “রাগিস কেন ? কতখন লাগবে একটা বাসন মাজতে ?” ধাক্কাটা যে চাপা শুধু আগে বাসন মাজিবার সুযোগ পাওয়ার জন্য দেয় নাই, যশোদা তা জানে। একবার ভাবিল চাপাকে ধমক দেয়, তারপর ভাবিল, কি হইবে ধমক দিয়া ? শক্ত-সমর্থ যে মেয়ে মুখ বুজিয়া এমন ধাক্কাটা সন্থ করে, তার হইয়া কিছু করিতেও যশোদার ভাল লাগে না । কালোর উপর চাপার বড় দ্বেষ, কোন দোষ নাই কালোর, তবু চাপা তাকে দেখিতে পারে না। প্ৰকারান্তরে দোষ আছে কালোর, চাপার সুখের পথে সে কঁাটা হইয়া আছে। চাপার মা ক্ৰমাগত জরে ভোগে, চাপার বাবা নদের চাদ নেশার ফাঁদে পড়িয়া অকালে বুড়ো হইয়া পড়িয়াছে, বড় কষ্টে দিন কাটে চাপার। এতদিনে একটু সুখের সম্ভাবনা ঘটিয়াছে চাপার। জগতকে সে কি করিয়া বাগ মানাইয়াছে সেই জানে, বোধ হয় সেও অল্পদিন সহৱে আসিয়াছে বলিয়া সহরে মেয়েটাকে আঁটিয়া উঠিতে পারে নাই। মাস ছয়েক আগে জগতের বৌ মরিয়া গিয়াছিল, তার তিনমাস পরে সকলে জানিয়াছে, চাপার সঙ্গে