পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী মিলের পক্ষে অবাঞ্ছিতদের লিষ্টে । আজকের গণ্ডগোলের সুযোগে মতি আর সুধীরের সঙ্গে এদেরও কাশীবাবু তাড়াইয়া দিল। ওরা মারামারি করে নাই ? কাশীবাবু নিজের চোখে ওদের মারামারি করিতে দেখিয়াছে, আলকাতরার জন্য ভরদ্বাজ চোখের পাতা ভাল করিয়া খুলিতে পারিতেছিল না, তবু সেও দেখিয়াছে, কাশীবাবুর আরও ক'ত পার্শ্বচরও যে দেখিয়াছে তার হিসাব হয় না। দশজনের কাজ গেল। কাশীবাবুর কড়া হুকুমে মিলের মধ্যে কৰ্ম্মব্যস্ততা আবার চরমে উঠিয়া গেল, মানুষ আর যন্ত্র সমানে কাজ করিতে লাগিল। কি যেন একটা উদ্দেশ্য সাধন করিতে হইবে কিন্তু হাতে যথেষ্ট সময় নাই, তাই উৰ্দ্ধশ্বাসে কাজ করা । এত ব্যস্ত তার মধ্যে একটুও আবেগ নাই, ব্যাকুল তা নাই, নাকে মুখে ভাত গুজিয়া কারখানার দিকে ছুটিবার সময় একজন মাত্ৰ মানুষের মধ্যে যতখানি আবেগ আর ব্যাকুলত সৃষ্টি হয়, এখানে এতগুলি মানুষের সমবেত ব্যস্ততার মধ্যে সেটুকু ভাবোঞ্ছাসের ছন্দও নাই । তবু মানুষ তো যন্ত্রের অধীন নয়, যন্ত্রই মানুষের অধীন, প্ৰভুত্বটা এখনও ঠিক মত আয়ত্ত হয় নাই মানুষের, এই যা আপশোষ। তাই টিফিনের ছুটির সময় কারখানার প্রাঙ্গণে দশ জন বরখাস্ত শ্রমিককে ঘিরিয়া সকলে জটিল করিতে লাগিল, একটু বক্তৃতাও বুঝি করিল দু-একজন । টিফিনের সময় শেষ হওয়ার পরেও জটিল। থামিল না । মিলের কাজ বন্ধ হইয়া রহিল। কাশীবাবু ভড়কাইয়া গিয়া ক্ৰমাগত ফোন করিতে লাগিল হেড অফিসে আর সত্যপ্ৰিয়ের <s কিন্তু কিছুতেই এবার ধৰ্ম্মঘট ঠেকানো গেল না। যে দশজনকে বরখাস্ত করা হইয়াছে তাদের আবার কাজে ম! নিলে কেহ কাজ করিবে না । হেড অফিসে ফোনটা সত্যপ্ৰিয়ের কানেই প্ৰায় লাগান ছিল, সমস্তক্ষণ, মিনিটে মিনিটে খবর যাইতেছিল। মন্তব্য প্রায় কিছুই করিতেছিল না, কেবল শুনিতেছিল । একবার শুধু বলিয়াছিল-ব্যাখ্যা আপনাকে করতে হবে না। কাশীবাবু, যা ঘটেছে তাই শুধু বলে যান। না, এখনও পুলিশ ডাকবেন না, আরেকটু দেখা যাক । ভয় পাবেন না মশায়, পুলিশ রেডি হয়েই আছে, ডাকামাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে হাজির হবে। অনাথ পৌছয়নি ? দেখুন তো । অনাথ সত্যপ্রিয়ের সেক্রেটারী। কাশীবাবু দেখিয়া আসিয়া জানাইল, অনাথবাবু 88