পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Níf er পরদিন দুপুরবেল ডাক আসিল যশোদার, মিলে মজলিস বসিয়াছে, একবার যাইতে হইবে যশোদাকে। কাশীবাবু নিজে গাড়ী নিয়া আসিয়াছে। “আমি গিয়ে কি করব ?” “আপনি মাতিয়ে দিয়েছেন ওদের, আপনি না গেলে ওরা কারও কথা শুনবে না ।” যশোদা উদাসীভাবে বলিল, “ওদের দাবী মিটিয়ে দিলেই কথা শুনবে ।” সেই তো সমস্যা দাড়াইয়াছে এখন। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের দাবী বাড়িয়া গিয়াছে, দশজন বরখাস্ত শ্রমিককে ফিরাইয়া নিলেই আর চলিবে না, আগের বার যে সব দাবী উপলক্ষে ধৰ্ম্মঘট বাধিবার উপক্রম হইয়াছিল। সেই গুলিও • মিটাইয়া দেওয়া চাই ।

  • আপনার পরামর্শে এটা হয়েছে।’ “আমার পরামর্শ কি ওরা শোনে ? শুনলে কি আর এ দুর্দশা হয় ওদের ? কত বলি যে কাজ কৰ্ম্মে যখন থাকে, পয়সা জমা দুটো, অসময়ে কাজে লাগবে। কানেও তোলে না কেউ আমার কথা ।”

গাড়ীতে উঠিয়া বসিয়া গম্ভীরভাবে যশোদা মাথা নাড়ে, ‘কথায় বলে না। অভাবে সম্ভাব নষ্ট, তাই হয়েছে ওদের । মজুরী হাতে পেলেই আর ছেড়া ন্যাকড়াটি পরা চলবে না, নতুন একটি কাপড় কেনা চাই। একটি গামছা কেনা চাই, জলপানি খাওয়া চাই, গায়ে তেল মাখা চাই-” যশোদা তামাসা করিতেছে কিনা। কাশীবাবু ঠিক বুঝিতে পারে না, দ্বিধাভরে বলে, “তাড়ি খেয়ে খেয়েই ওদের যত দুৰ্দশা ।” তাড়ি খেয়ে ? তাড়ি না খেলে ওরা বাচিত ? খাওয়ার মধ্যে খায় তো শুধু একটু তাড়ি, নয়তো একটু দিশী, তাও যদি না খাবে, খিদে-তেষ্টা মিটবে কিসে ?? শুনিয়া সেই যে কাশীবাবু চুপ করিয়া গেল, আর কথাটি বলিল না। মিলের সামনে পাচ ছ’শ শ্রমিক এলেমেলোভাবে ভিড় করিয়া আছে, যশোদাকে দেখিয়া তাদের কি উৎসাহ ! ধৰ্ম্মঘটের চেয়ে আজ সারাদিন যশোদার কথাই তারা বেশী আলোচনা করিয়াছে। মুখে মুখে কত কথাই যে রটিয়াছে যশোদার সম্বন্ধে ! মিলের ভিতরে আপিসঘরে বৈঠক বসিয়াছে। বৈঠকে অনাথ, হেড অফিসের আরও দু’জন বড় কৰ্ম্মচারি এবং শ্রমিক সমিতির দু’জন প্ৰতিনিধি আছে। st