পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী কি জান, শুনে আমি বড় খুন্সী হয়েছি-সত্যি বলছি তোমায়। মতি চুপচাপ সয়ে গেল কথাটি কইলো না, ছিছি, ওটা কি মানুষ ? ভীরু অপদার্থ ওটা । তোমার সাহস আছে, তুমি তাই রুখে দাড়ালে-আর কেউ পরের অপমান গায়ে মেখে নিত অমনি করে ? শুনিতে শুনিতে বাতাসে মেঘ উড়িয়া যাওয়ার মত সুধীরের মুখের উপর হইতে রাগ দুঃখ অভিমানের ছায়া মিলাইয়া যাইতে থাকে। একটু নরম গলায় সে বলে, “তুমি বললেই ওরা আমায় রাখত।”

  • তাতে লাভটা কি হ’ত বল ? এরপর ওখানে আর কাজ করতে পারতে তুমি ? ও কাজ গেছে যাক-আমি তোমােয় ভাল কাজ জুটিয়ে দেব। বেশী মাইনে, কম খাটুনি । মানুষের মত তেজ আর বুকের পাটা কটা লোকের থাকে ? তোমার তো আছে জেনে ভাবলাম তুমি আরও ভাল কাজের যুগ্যি—এইসব ভেবে আর বললাম না তোমায় ফিরিয়ে নিতে।”

বড় শ্রান্তি বোধ হইতেছিল যশোদার । যতবড় শরীর হোক, সন্থের তো একটা সীমা আছে ? ঘরের কাজে যশোদাকে যে সাহায্য করিতে আসে, অসুখ হইয়া তিনদিন সে আসে নাই। ঘরে বাহিরে কি খাটুনি আর হাঙ্গামাই তাকে পোয়াইতে হইতেছে। তার উপর আবার এই বোকা হব। ধাড়ী শিশুকে বুঝাইয়া শান্ত করিবার দায়িত্বটা পৰ্যন্ত তার। চৌকীর এক পাশে বসিয়া হাই তুলিয়া যশোদা অ্যাবার বলে, “কাজ গিয়ে শাপে বর হ’ল তোমার।’ সুধীর অভিভূত হইয়া যশোদাকে দেখিতে থাকে, সে দৃষ্টিতে অন্য কারও হয়তো রোমাঞ্চ হইতে, যশোদা দেখিয়াও দেখে না । আবার হাই তুলিয়া বলে, ‘এবার ভাত খাবে চলা-দু’টি খেয়ে নিয়ে রোহাই দাও আমায়।” সুধীর মিনতি করিয়া বলে, “একটু বোসে চাদের মা, একটু গল্প করি তোমার সঙ্গে ।।’ “কি বললে ? গল্প ? বসে বসে গল্প করবো তোমার সঙ্গে ? খাবে তো খেয়ে যাও সুধীর, নয় তো উপোসে রাত কাটবে বলে রাখলাম।” RSS