পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহয়তলী করতে পারবে না । কলকাতার মত পাজী জায়গা আছে ! পেট ভরে মানুষ খেতে পৰ্য্যন্ত পায় না বাছা তোমাদের কলকাতায়, এ্যা !’ যশোদা ফোস করিয়া উঠিল, “কেন, পেট ভরে খেতে দিই না তোমাকে ?” ধনঞ্জয় লজ্জিত হইয়া বলিল, “আমার কথা বলছি নাকি ? যেমন ধরা ওই খাবারের দোকানটা, চার আনার খাবার কেনো, একবারটি মুখে দিতে কুলোবে न ।।” “ভারি খাইয়ে তুমি তাই বলছি। একসের রসগোল্লা খেলে ঢেকুর তুলবে।” যশোদা আর একটু খোচাইতেই ধনঞ্জয় রাগ করিয়া তার খাওয়ার শক্তির পরিচয় দিতে স্বীকার হইয়া গেল। পাচ টাকার একটা নোট সঙ্গে করিয়া যশোদা বাহির হইয়াছিল, নতুবা সে এ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ধনঞ্জয়কে ক্ষেপাইয়া তুলিত কিনা সন্দেহ। নিজেরও যশোদার ক্ষুধা পাইয়াছিল বৈকি, ভাল খাবার খাইতে তার নিজেরও তলে তলে বেশ একটু লোভ ছিল বৈকি। যশোদা ভাত খায় তার সব চেয়ে যোয়ান ভাড়াটের তিনগুণ, সেই জন্যই সে মাঝে মাঝে রীতিমত সঙ্কোচ বোধ করে, প্ৰাণ ভরিয়া ভাল খাবার খাওয়ার সাধটা তার সাধারণতঃ চাপাই থাকে। আজি ধনঞ্জয়ের সঙ্গে নিশ্চিন্ত মনে পেট ভরিয়া খাবার খাইল-ধনঞ্জয়ের খাওয়ার পরিমাণটা তার চেয়েও বেশী, এই জন্য ধনঞ্জয়ের কাছে বসিয়া খাইতে তার লজ্জা করে না । দু’জনকে একত্ৰ দেখিলেই লোকের একটু অবাক হইয়া চাহিয়া থাকার কথা, দোকানী সবিস্ময়ে দু’জনের খাওয়া দেখিতে লাগিল। তারপর হাসিয়া ফেলিল । চোখে পড়ায় ধনঞ্জয় রাগিয়া বলিল, “হাসি কি জন্যে শুনি ?? যশোদা বলিল, “আমাদের খাওয়া দেখে হাসছে আর কি।” দোকানীর হাসি নিভিয়া গিয়াছিল, হাত জোড় করিয়া সে তাড়াতাড়ি বলিল, “আজ্ঞে না গিরিমা, খাওয়া দেখে কি হাসতে পারি। আপনারা খাবেন। আজ্ঞে, তবে তো আমাদের দুটো পয়সা । আপনাদের দেখে বড় আনন্দ হল কিনা মনে, তাই হাসলাম একটু মনের সুখে । আমার একটি দিদি আছে গিরিমা, আমার পিসতাতো দিদি, তেনাও আপনারি মত আজ্ঞা ।” যশোদা বলিল, “বটে নাকি ?”