পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী দু’একটা সংক্ষিপ্ত মন্তব্য হয়তো করে। কঁচা-পাকা চুলে ঢাকা মাথাটি নাড়িতে নাড়িতে বলে, “ছি ছি, ওকে আর বাড়ীতে ঢুকতে দিও না।” তারপব কাজে যাওয়ার সময় হয়তো যশোদার বাড়ীতে একবার উকি দিয়া যায়, জীর্ণ শীর্ণ মুখের চামড়া কৌতুকের হাসিতে কুঁচকাইয়া কুমুদিনীর নিন্দাগুলি সব যশোদাকে শোনায়, বলে, “শুনলে যশোদা, কিসব বলে তোমার নামে ?” যশোদা কিছুমাত্র বিচলিত না হইয়া বলে, “বলুগে যাক, মরুকগে যাক, আজ তো নতুন নয়। ছেলেবেলা থেকে এমনি করে বলছে আমার নামে । তবে কি জান সরকারমশায়, আমার জন্যে। ওর সত্যি মায়া আছে । এমনি বলে মুখে, কিন্তু-” বাড়ীতে যতই নিরীহ হইয়া থাক, যশোদার কাছে যতই কৌতুকের হাসি হাসুক, মেজাজ কিন্তু রাজেনের একেবারেই ঠাণ্ডা নয়। সুধীর কয়েকবার বোকার মত প্রশ্ন করিলেই তার মেজাজ গরম হইয়া যায়। ‘মনে থাকে না তোর নচ্ছার ? ক’বার বলব ?? নাকের মাঝখানে আঁাটা চশমার ভিতর দিয়া রাজেন হাতের খাতাটির বাদামী রঙের পাতায় চোখ বুলাইয়া বলে, “তেইশটা ৷” “যায়গা থাকবে।” “থাকবে তো তোর কি ? তোর বাবার ওয়াগন ?? নির্দোষ মন্তব্যের জবাবটা একটু কড়া হইয়া গিয়াছে ভাবিয়াই হয়তো রাজেন একটু মৃদু গলায় বলে, ছেচল্লিশটা বস্তা দুটো ওয়ােগনে যাবে, তেইশ ভাগ হবে না-রে পাঠা কোথাকার।’ “অ !’ সুধীর তাড়াতাড়ি আর একবার ওয়াগনের ভিতরে গিয়া বস্তাগুলি গুণিয়া ফেলে। আরও কয়েকটি ওয়াগনে একই সময়ে মাল বোঝাই হইতেছিল। চটে মোড়া, কাঠের বাক্সে প্যাক করা, চৌকো গোল ছোট বড় কত মাল এখানে আসিয়া জমা হইয়াছে, কাছে ও দূরে কত বিভিন্ন তাদের গন্তব্য স্থান । প্ৰতিদিন রাশি রাশি মাল বাহিরে চলিয়া যায়, কিন্তু সহরের মাল ভাণ্ডার যেন অফুরন্তু। কথাটা ভাবিতে গেলে মাঝে মাঝে বিব্রত হইয়া সুধীরকে মাথা চুলকাইতে হয়, ব্যাপারটা সে ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারে না। মাল যে কেবল এখান হইতে বাহিরে চলিয়া যায় তা অবশ্য নয়, ধুকিতে খুঁকিতে ইঞ্জিন যে লম্বা ওয়াগনের সারি বাহির হইতে টানিয়া আনে সেগুলিও VO