পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী হইয়া সকলকে তাই বুঝাইতে থাকে, শুনিতে শুনিতে দীননাথ কঁাদিয়া ফেলে। নন্দকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া বলে, “আমি কি পারি ? এমন কিশোর কোমল কণ্ঠ আমি কোথায় পাব ? বিরহ যাতনায় শুমের যখন আমার চেতনা লোপ পেয়ে এসেছে, রাধার নাম নিতে নিতেই শেষ নিশ্বাস ফেলবেন ভেবে অস্ফুটম্বরে বলছেন রাধ রাধা, আর নিজের মুখে রাধার নাম শুনে দেহে যেন জীবন ফিরে আসছে—তখনকার সেই আকুল মিনতিভার ডাক আমার এই কৰ্কশ কণ্ঠে আমি কেমন করে ফোটাবো গো ।” সত্য সত্যই এমনিভাবে বলে দীননাথ, নাটকের পাটের মত আগে হইতে যেন মুখস্থ করা ছিল। আসরে যে আবহাওয়াটা তখন সৃষ্টি হইয়া আছে, শ্রোতারা যে রকম মুগ্ধ ও বিভোর হইয়া গিয়াছে, তাতে দীননাথের কথা ও কাল্লায় সকলের চোখ সজল হইয়া আসে, অনেকে ভেউ ভেউ করিয়া কঁাদিয়া উঠিতে চায়, কেউ কেউ কঁদেও । বড় আসরে অনেকক্ষণ জমজমাট কীত্তন করিয়া আসিবার পর দু’তিন দিন নন্দ হাসে না, কথা বলে না, খাইতে চায় না, নড়াচড়া করিতে চায় না, প্ৰাণহীন জড়পিণ্ডের মত শুইয়া বসিয়া সময় কটায় । যশোদা ভয়ে ভয়ে ভাবে যে, কি জানি কি হইবে, এরকম প্ৰচণ্ড ভাবাবেগ আর তার প্রতিক্রিয়া এই রোগ দুৰ্বল ছেলেমানুষের কতদিন সন্থ হইবে ? নন্দর কীৰ্ত্তনের মোহ কাটাইতে কত চেষ্টাই যে যশোদা করিয়াছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। জোর করিয়া আটকাইয়া রাখিলে দিন দিন নন্দর ভাবপ্রবণতা আর অবরুদ্ধ উত্তেজনার চাঞ্চল্য এমনভাবে বাড়িয়া যাইতে থাকে যে, তাতেও যশোদা ভয় পাইয়া যায়। একি অপদার্থ একটা জন্মিয়াছিল তার ভাই হইয়া ? এর চেয়ে কোকেনখোৱা আফিমখোৱেৱাও ভাল, তারা কেবল নিজেদেরই সৰ্ব্বনাশ করে, এ ছোড়া আরও কত ছেলে-মেয়েকে গোল্লায় পাঠাইতেছে তার হিসাব নাই। একদিন সত্যপ্ৰিয় নন্দর কীৰ্ত্তন শুনিবার আগ্রহ জানাইয়া অনুরোধ করিয়া পাঠাইল । অনুরোধটা আসিল জ্যোতিৰ্ম্ময়ের মারফতে। সেদিন পিতৃশ্ৰাদ্ধের নিমন্ত্রণে নন্দকে নিয়া একটু নিদোষ পরিহাস করায় নন্দ যে রাগ করিয়া চাকরী ছাড়িয়া দিয়াছে, একথা জানিয়া সত্যপ্ৰিয়র নাকি দুঃখের সীমা নাই। নম্পন্ন জায়গায় অবশ্য আরেকজন লোক নেওয়া হইয়াছে, কিন্তু সত্যপ্রিয় যত ՀեrS s