পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী মধ্যে যশোদাও শয্যা গ্ৰহণ করিত আর তার নিজেরই দরকার হইত সেবাৱ । এই সব দুর্ভাবনায় অন্যমনস্ক হইয়া রাজেনের গালাগালিতে সুধীরের প্রাণান্ত হয়। সুদীর্ঘ সরীসৃপের মত লম্বা মালগাড়ীর একপ্ৰান্তে ইঞ্জিন আসিয়া ঠেকিলে ওয়াগনের সঙ্গে ওয়াগনের ধাক্কায় যে শব্দ ওঠে তাতে সে চমকাইয় ওঠে । না, এর চেয়ে তার একটা পা কাটা গেলে যেন ভাল ছিল ! অথবা পা কাটার বদলে ধনঞ্জয় যদি একেবারে মরিয়া যাইত । ধনঞ্জয় অবশ্য এখনও মরিতে পারে,-কিন্তু লোকটার মারা-বাচার ভার কি ভগবান সুধীরের হাতে ছাড়িয়া দিবেন। একদিন এক মুহুর্তের জন্য, সেদিন তাকে আলগা ওয়াগনটার পাশে দাড় করাইয়া রাখিয়া হঠাৎ সুধীরের মাথায় ওয়াগনটা ঠেলিয়া দিবার বুদ্ধি যেমন যোগাইয়া দিয়াছিলেন ? এই চিন্তাটা মাথায় আসিলে সুধীরের মুখের ভাব এমন হয় যে বকিতে গিয়া রাজেন পৰ্য্যন্ত তাকে কিছু বলিতে সাহস পায় না কথাগুলি গিলিয়া ফেলে । বাড়ী ছাড়িয়া কাজে আসিতে সুধীরের ভাল লাগে না, নানা ছুতায় সে বাড়ীতে বসিয়া থাকিবার চেষ্টা করে। কাজে যাইবে না কেন, কি হইয়াছে সুধীরের ? অসুখ হইয়াছে,-পেট ব্যথা করিতেছে। বেশ, তবে আর এবেলা সুধীরেব কিছু খাইয়া কাজ নাই । “তোমার ব্যাপারখানা কিছু ধরতে পারছি না। সুধীর । কাজে নাকি ফঁাকি দিচ্ছি। আর মেজাজ দেখাচ্ছে, রাজেন বললে । এ তো ভাল কথা নয় ? এ কাজটা যদি যায় তোমার, আর কাজ আমি জুটিয়ে দিতে পারব না বলে রাখছি।” ‘ন দিলে কাজ জুটিয়ে, কাজ করব না।” খাইয়া দাইয়া দেৱী করিয়া সুধীর সেদিন কাজে গেল বটে, মাঝরাত্রে ফিরিয়া আসিল মাতাল হইয়া । আসিয়া এমন মাতলামিই সে আরম্ভ করিয়া দিল, শুধু মদ খাইয়া মাতাল হইয়া যেটা কোন মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব নয়। কুড়ি বাইশজন কুলীমজুরকে বাড়ীতে রাখিয়াও যশোদা তার বাড়ীকে এতদিন ঠিক বস্তিৱ পৰ্য্যায়ে নামিতে দেয় নাই, সুধীর একাই সেই কাজটা করিয়া দিল ।