পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী সকালে ঘরের বাহিরে আসিয়া কলতলায় যশোদাকে দেখিয়াই চোরের মত সুধীর আস্তে আস্তে পলাইয়া যায়। দোষ করিয়া গুরুজনের কাছে ছোট ছেলে যেমন করে। দেখিয়া কে বলিবে এই সেই গোয়ার গোবিন্দ সুধীর, মতির হইয়া যে মিলে মারামারি করিয়াছিল, যশোদাকে কাল যে ডাক দিয়া বলিয়াছিল, চলগো যশোদা, আমরা হাত ধরাধরি করে পীরিত করতে যাই । সারাদিন সুধীরের পাত্তা মিলিল না, সারাদিন যশোদা তারই কথা উল্টোইয়া পাণ্টাইয়া মনের মধ্যে নাড়াচাড়া করিতে লাগিল। এক রাত্রেই যশোদার মন শান্ত হইয়া গিয়াছে, নিজের ভাবপ্রবণতার মেঘ কাটিয়া যাওয়ায় আর সুধীরের মত গৃহসুখে বঞ্চিত অশিক্ষিত বর্বর দুর্ভাগ্যগুলির জন্য তার স্বাভাবিক মমতা ফিরিয়া আসায়, এবার ধীরে ধীরে সে সুধীরের পাগলামীর মানে বুঝিতে পারে। কবে যেন সন্ধীর প্রথম টের পাইয়াছিল, সংসারে টাকা বল, রূপ যৌবন বল, দরদ ছাড়া সখ নাই ? যশোদা যেদিন তাকে ভাত খাওয়ার সযোগ দিতে ছল করিয়া বাড়ীর বাহির হইয়া গিয়াছিল। সতরাং দরদের দাম কষিতে তাকে শিখাইয়াছে যশোদাই। আর মতি যেন কি বলিয়াছে সন্ধীরকে ? পুরুষের ভালবাসা না। পাওয়ায় মনটা বিগড়াইয়া গিয়াছে যশোদার । যশোদার কাছে দরদ চিনিয়া রূপলাবণ্যের অভাবে পুরুষের ভালবাসা না পাইয়া যশোদা মনে মনে কঁদিতেছে জানিয়া, সখীরের পক্ষে একথা মনে করা আশ্চর্য কি যে তার মত যোয়ান বয়সী। মানুষের ভালবাসা পাইয়া যশোদা একেবারে কৃতাৰ্থ হইয়া যাইবে । স্বস্তি বোধ করে যশোদা, মুখে একটু হাসিও তার দেখা দেয়। আহা, সখীর তবে সত্যই দরদ দেখাইতেছিল ! হাতীর মত যে যশোদাকে কেউ চায় না, তাকে সঙ্গে করিয়া পালাইতে চাহিয়া সেই একটা মন্ত ত্যাগ স্বীকার করিতেছিল । তার আসল লোভ যে শ্ৰীমতী যশোদার উপর, সেই রোজগার করিয়া যশোদাকে খাওয়াইবে, এই কথাটায় যশোদার বিশ্বাস জন্মানোর জন্য তাই আমন ব্যাকুল হইয়া পড়িয়াছিল সখীয়। রাত্রে রান্না করিতে করিতে যশোদা ভাবে, না, তার কুলীমজুরেরাই ভাল। এদের যদি আপন না করিবে, আপন হইবে কারা ? সত্যপ্রিয়ের মত যারা বড়লোক, অথবা জ্যোতিৰ্ম্ময়ের মত যারা ভদ্রলোক ? বড়লোক, ভদ্রলোক আর ছোটলোক, বিগড়াইয়া অবশ্য গিয়াছে সকলেই, তবু অভাবে যাৱা বিগড়াইয়া গিয়াছে তারা vo)