পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী যে মুহুর্তে ভারতবাসী রাজশক্তির সহিত বিরোধ পরিত্যাগের চেষ্টা আরম্ভ করিবে, সেই মুহুৰ্ত্ত হইতে ধৰ্ম্ম ও সমাজের অধোগতি রদ হইয়া দেশবাসীর অন্নকষ্ট, সুখশান্তির অভাব, স্বাস্থ্যের অভাব এ সমস্তের প্রতিকারও আরম্ভ হইবে-বিশ বৎসর পরে দেখা যাইবে, একমাত্র পরাধীনতা ছাড়া ভারতবর্ষের কোন অভাব নাই। ভারতীয় ধৰ্ম্ম, ভারতীয় সমাজ-বিধান চরম উন্নতি লাভ করায় তখন রাজশক্তিরও পরিবর্তন ঘটিতে আরম্ভ করিবে, কারণ, প্ৰকৃতির নিয়মে ধৰ্ম্ম ও সমাজ বিধানের অনুরূপ রাজশক্তিই দেশে প্রচলিত থাকিতে পারে ; এইখানে ঋষিগণের বাক্য হইতে সত্যপ্ৰিয় দেখাইয়াছে, একমাত্র ঈশ্বর ভিন্ন আধারহীন শক্তি হয় না, আধাৱ পরিবত্তিত হইলেই শক্তির বাহ্যিক রূপান্তর ঘটবে, অবশ্য মূল শক্তি চিরদিনই অবিনাশী ও অপরিবর্তনীয়, ইত্যাদি । তের বৎসর ভারতবাসী যদি ধৰ্ম্ম আর সমাজ বিধানের উৎকর্ষ বজায় রাখিতে পাৱে ভারতের বৈদেশিক রাজশক্তি ভারতীয় রাজশক্তিতে পরিণত হইবে। সুতরাং তেত্ৰিশ বৎসরে ভারতবর্ষ কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, সর্বপ্রকার স্বাধীনতা লাভ কৱিবে । নান্য পন্থা বিদ্যতে আয়নায় । ইংরেজ-বিদ্বেষ প্রচার করিয়া, স্বাধীনতার আন্দোলন তুলিয়া নেতৃবৰ্গদেশের ধ্বংসের পথটাই পরিষ্কার করিয়া দিতেছে-স্বাধীনতাকে হাজার বৎসর ভবিষ্যতে ঠেলিয়া দিতেছে । সত্য কথা বলিতে গেলে, সত্যপ্ৰিয়ের প্রবন্ধটি জ্যোতিন্ময়ের কাছে কতকটা প্ৰলাপের মত মনে হইয়াছে, তবু কি যেন আছে প্ৰবন্ধটিতে যা মনের নীতিধৰ্ম্মগত অন্ধ বিশ্বাসে জন্ম-মৃত্যু-সীমাহীনতা নক্ষত্ৰলোক-আশ্রয়ী দুৰ্বোধ্য ও রহস্যময় অনুভূতির জগতে, কেমন যেন একটা অদ্ভুত প্রভাব বিস্তার করে। আশার কথা বলা হইয়াছে, তবু অকারণ হতাশায় মন ভরিয়া যায়, কার্যের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে তবু মনে হয়। হাত পা গুটািইয়া বসিয়া থাকাই ভাল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার কথা বলিতে বসিয়া প্ৰাচীন ভারতের স্বর্গের সঙ্গে বৰ্ত্তমান ভারতের নরকের তুলনা করিয়া, ধৰ্ম্ম আর ঈশ্বর আর দর্শনের কথা বলিয়া, সত্যপ্রিয় যেন একেবারে মনের ভিত্তি ধরিয়া নাড়া দেয়,-আসল বক্তব্য সত্যপ্রিয় কি যুক্তি দিয়া প্ৰমাণ করিয়াছে সে বিষয়ে মাথা না ঘামাইয়াই তার কথা মানিয়া লইতে ইচ্ছা হয়। মাঝে মাঝে, বহির্জগতের চিন্তাধারার সঙ্গে হঠাৎ যখন জ্যোতিস্ময়ের কোন কারণে একটু সংস্পর্শ ঘটয়া যায়, তখন দু’একবার তার মনে হইয়াছে, সত্যপ্রিয়ের বলিবার যেন কিছুই v)