পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী অনুতপ্তকণ্ঠে সে বলিল, “ইস, গালটা যে তোর ফুলে গিয়েছে সুবর্ণ। খুব লেগেছিল না ? সেই শাড়ীটা তোকে কিনে দেব সুবর্ণ।” কয়েকদিন আগে স্কুলে যাওয়ার জন্য নতুন ফ্যাশানের একটা শাড়ী চাহিয়া সুবৰ্ণ জ্যোতিৰ্ম্ময়ের ধমক খাইয়াছিল, এদিকে খরচ চলে না, নিত্য নূতন ফ্যাশানের শাড়ী ! সেদিন সুবৰ্ণ ভাবিয়াছিল যে, হাঁ, বৌদিকে তো খুব কিনে দিতে পাৱ, আমায় দেবার বেলাই তোমার খরচ চলে না। গালে চড় মারার ক্ষতিপূরণস্বরূপ জ্যোতিন্ময় সেই শাড়ীখানা কিনিয়া দিবে শুনিয়া হঠাৎ তার মনে পড়িয়া গেল, অপরাজিতার রাশি রাশি শাড়ী সমস্তই এবার সে পাইবে । মনে পড়ায় সুবণ ফু পাইয়া ফু পাইয়া কঁাদিতে লাগিল। অপরাজিতার শোকে নন্দর কঁাদিবার কথা নয়, মুখখানা মান ও গম্ভীর করিয়া ব্ৰাখিলেই যথেষ্ট হইত, সুবণকে আকুল হইয়া কঁদিতে দেখিয়া সেও চোখ মুছিতে লাগিল । তখন দেখা গেল, জ্যোতিৰ্ম্ময়ের চোখ দিয়াও জল পড়িতেছে। কান্না বোধ হয় dist(5 团 পাড়ায় চার-পাঁচটি নূতন বাড়ী তৈরী হইতেছে। সহরতলীর পরিবর্তন আরম্ভ হইয়াছে কয়েক বছর আগে, দিন দিন পরিবর্তন যেন দ্রুততর হইয়া উঠিতেছে । সহরের লোক সহর ছাড়িয়া সহরতলীতে বাস করিতে আসিতেছে। একি একটা নূতন ফ্যাশন ? ভবানীপুর কালিঘাটের মত যেখানে ধনঞ্জয়ের মতে এককালে দিন-দুপুরে শিয়াল ডাকিত, এই সহরতলীকেও সািহর ক্ৰমে ক্রমে গ্ৰাস করিয়া ফেলিবো ? দশ-বার বছর আগে এ অঞ্চল কি ছিল, এখন কি দাড়াইয়াছে, ভাবিলেও যশোদা অবাক হইয়া যায়। কাছাকাছি যে প্ৰকাণ্ড একটা সহৱ আছে, তখন তাই-বা কে ভাবিতে পারিত ? ছড়ানো বাড়ী-ঘর, মেটে পথ, ডোবা-পুকুর, বঁাশঝাড় এসব কিছুরই অভাব তখন ছিল না। সত্যপ্রিয়ের বাগানবাড়ীটা ছিল প্ৰায় জঙ্গল, বাগানবাড়ীর দক্ষিণদিকে কয়েক ঘর গরীব মুসলমানের একটি বন্তি ছিল Vogy