পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী যশোদা যে কুলীমজুরদের সঙ্গে ঘর করে, তারা পেট ভরিয়া খাইতে পায়, পরিষ্কার জাম-কাপড় পরিতে পায়, দরকার মত স্ত্রী পায়, জীবনটা উপভোগ করার মত অবসর পায়—আর ? আর কি পায় ? পেট ভরিয়া খাইতে পায়, পরিষ্কার জামাকাপড় পরিতে পায়, দরকার মত স্ত্রী পায়, জীবনটা উপভোগ করার মত অবসর পায়—আর ? মনে মনেও তার আদরের হতভাগাগুলোকে পাওয়াইয়া দেওয়ার ব্যাপারে যশোদা তেমন পটু নয়! কত কিছু কাম্য আছে মানুষের, কত কিছু পাইতে পারে মানুষ, কত কিছু পাইয়াছে মানুষ, কিন্তু এদের দেওয়ার সময় যশোদা যেন সে সমস্তের হদিস পায় না, এদের যেন ধন-মান ঘাস্থ্য সুখ তেজ শক্তি জ্ঞান বুদ্ধি রূপ যশ এ সমস্তের সত্যই দাবী থাকিতে নাই । কিন্তু এদের পেটের জ্বালা, রোগ শোক দুঃখ গ্লানি অভাব অভিযোগ মনোবিকার এ সমস্ত ম্যাজিকের মত দূর করিয়া দিবার ক্ষমতা যশোদার কল্পনার আশ্চৰ্য্য রকম আছে। এদের দুর্দশা দেখিতে দেখিতে কল্পনা-বোধ হয় তার হইয়া গিয়াছে ভোতা, তাই অসম্ভব স্বপ্ন দেখিতে পারে না, ভিখারীকে রাজা হওয়ার আশীৰ্ব্বাদ করিতে যে কেউ তাকে বারণ করে নাই এটা ভুলিয়া গিয়া শুধু বলিতে পারে, আহা, খোড়া পা নিয়ে তুমি এত কষ্ট পাচ্ছি, তোমার কষ্ট কমুক, তোমার দুঃখ দূর হােক । খোড়া ধনঞ্জয়ের কাঠের পা আসিয়াছে। পাড়ায় চাঁদা তুলিয়া আর নিজে কয়েকটা টাকা দিয়া যশোদাই তাকে কৃত্ৰিম প’টি কিনিয়া দিয়াছে। যশোদার শক্ৰ আর ছেলেবেলার সখী কুমুদিনী চার আন চাঁদা দিয়া বলিয়াছে, “আর কেন ভাই, এবার মায়া কাটিয়ে বিদেয় দে। লোকে যে নিন্দে করছে ভাই ?” ‘কেন নিন্দে করছে ? কিসের নিন্দে ?” “কচি খুকিটি কিনা, বোঝা না কেন নিন্দে করছে, কিসের নিন্দে !” যশোদার ন্যাকামিতে ক্ষুব্ধ হইয়া মুখ নাড়া দিলেও কুমুদিনী বুঝাইয়া বলে । বলে যে, মানুষটা যতদিন দু’পায়ে খাড়া ছিল, চেহারা যেমন হোক, দশজনের একজন হইয়া বাড়ীতে বাস করিত, লোকে হাসিতামাসা করিলেও তেমন কিছু বলিত না-হয়তো ভাবিতও না । কিন্তু এখন পা কাটা যাওয়ার পরেও যশোদা যদি তাকে ঘরে রাখিয়া পোষে, সকলকে অবহেলা করিয়া কেবল তাকে নিয়াই দিনরাত মাতিয়া থাকে, কাঠের পা কিনিয়া দিবার জন্য সকলের কাছে চান্দা । evo