পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী । পৰ্য্যন্ত আদায় করিতে সুরু করে যশোদা ফেঁাস করিয়া ওঠে, “কেন, সেবারে গগনার পা কাটা গেলে ঘরে রেখে পুষিনি তাকে ? কাঠের পা কিনে দিইনি। চাঁদা তুলে ?” কুমুদিনী বিজ্ঞের মত বলে, “সে হল আলাদা কথা । তারপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া আবার বলে, “যাকগে ভাই যা খুন্সী করগে ভাই তুই, কলঙ্কে আর ডর কি তোর, বোঝার ওপর শাকের আঁটি বৈত নয়। ছেলেবেলা সই পাতিয়েছি, তাইতে বলা, নয় তো আমার কি এলো গেলে ।” সামনাসামনি এমনভাবে কথা কুমুদিনী সচরাচর বলে না । চার আন চাদা দিতে হওয়ায় গায়ে এত জালা ধরিয়াছে না কি তার ? কে জানে, হয় তো ধনঞ্জয় আর তাকে নিয়া সত্য সত্যই খুব একচোট আলোচনা, গবেষণা আর নিন্দা SfēJē তারপর যশোদার কানে আসে, এ কাজে সুধীরের উৎসাহই নাকি সকলের চেয়ে বেশী, সত্য মিথ্যা কত কথাই যে সে রটাইয়া বেড়াইতেছে। এখনও সুধীরের ক্ষোভ থাকিবার কোন কারণ যশোদা ভাবিয়া পায় না । কালোকে নিয়া সে বরং এমন মাসগুল হইয়া পড়িয়াছে যে দেখিয়া শুনিয়া মনে হয়, অল্পের জন্য যশোদার হাত হইতে রেহাই পাওয়ার জন্য অদৃষ্টকে তার ধন্যবাদ দেওয়াই বেশী স্বাভাবিক। সুধীরের যে পরিবর্তন ঘটিয়াছে-গ্রীষ্মের তৃষ্ণাতুর পশুর একেবারে শ্রাবণের ধারা-জলে লুটোপুটি করার মত,-দেখিলে হাসিও পায় করুণাও হয়। ছায়ার মত যে যশোদার সঙ্গে সঙ্গে থাকিত, উদভ্ৰান্ত দৃষ্টিতে যশোদার চলাফেরা লক্ষ্য করিত, মুখ দেখিলে মনে হইত এই বুঝি সব্বনাশ ঘটিল, বহুদিনের উপবাসী বাঘের মত এই বুঝি সে ঝাপাইয়া পড়ে হুঙ্কার দিয়া যশোদার ঘাড়ে-সেই সুধীর এখন যশোদার ধারে কাছে ভিড়িতে চায় না, কেবলি এড়াইয়া চলিবার চেষ্টা করে, সামনে পড়িতে এদিক ওদিক তাকায় আর কখনো কখনো বোকার মত একটু হাসে আরও বেশী বোকার মত জিজ্ঞাসা করে, কি খবর চাঁদের মা ? চালচলন বদলাইয়া গিয়াছে সখীরের, মেজাজ নৱম হইয়াছে, শুকনো বাকলের মত রুক্ষ কঠিন মুখের চামড়ার ভিতর হইতে একটা কোমল আন্তরণের হদিসও যেন পাওয়া যাইতেছে না ? একটি কালো সোণার কাঠির ছোয়াচে মানুষটার মধ্যে যেন পলকে পলকে পরিবর্তনের ve