পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহয়তলী বলিতে বলিতে সত্যপ্রিয় রীতিমত উৎসাহিত হইয়া ওঠে, বোঝা যায় টাকার কথা বলিতে তার মজা লাগিতেছে। জীবনে একটি কাজ সে করিয়াছে জীবন দিয়া, এও একটা সাধনা বৈকি। কিন্তু এ সাধনার ফাকি যশোদা জানে, একটা সীমায় ঠেকিবার পর এ সাধনা একঘেয়ে হইয়া যায়, সেইখানে সাধনার সমাপ্তি, তারপর কেবল জোর টানিয়া চলা । সত্যপ্রিয় এখন তাই করিতেছে। ব্যাঙ্কে টাকা জমানো আর খোলামকুচি জমােনর মধ্যে আর বিশেষ কোন পার্থক্য এখন নাই। যত বড় পেটুক হোক, কত আর খাইতে পারে মানুষ ?-এইভাবে কথাটা যশোদা বিচার করে। বড়লোকের দান সম্বন্ধেও তার তাই বিশেষ শ্রদ্ধা নাই। কোটিপতিরা লাখ টাকার হাসপাতাল স্থাপন না করিলেই বরং সে একটু আশ্চৰ্য্য হয়, যেমন আশ্চৰ্য্য হয় ময়রার দোকানের পেটুক মালিক যদি অমাবস্যার নিশিপালন না করে । যশোদাকে অভিভূত হইতে না দেখিয়া সত্যপ্রিয় একটু ক্ষুন্ন হয়। নন্দকে চাকরী দিবার কারণটা জানিয়া যশোদা অনেকটা নিশ্চিন্ত মনে বাড়ী ফিরিয়া र | পরদিন কাশীবাবু আবার আসে, আবার বসিয়া বসিয়া গল্প করে, যাওয়ার সময় নন্দকে একেবারে সঙ্গে নিয়া যায়। এবার শািন্দ একেবারে চাকরীর দলিল নিয়া বাড়ী ফেরে, একমাসের নোটিশ না দিয়া কার ক্ষমতা আছে নন্দকে এবার বরখাস্ত করে ? করিলে, একটি মাসের বেতন মাগনা দিতে হইবে, চালাকি নয়। নন্দর সঙ্গে ! “কি করতে হবে তোকে কিছু না দিদি, কাশীবাবুৱা ঘরে একটা চেয়ারে বসে থাকব। আর কাশীবাবু যা বলবেন করব। আজকে শুধু সঙ্গে করে মিলটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিলেন। কাল থেকে কাজ আরম্ভ ।” পরদিন নন্দকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানা গেল, সারাদিনে সে ঘণ্টাখানেক খাতা লিখিয়াছে, দু’বার কাশীবাবুৱ হকুমে মিলটা ঘুরিয়া আসিয়াছে, আর একবার গিয়া একটি লোককে কাশীবাবুৱা কাছে ডাকিয়া আনিয়াছে। বাপ-মা ভুলিয়া গালাগালি দিয়া কাশীবাবু লোকটিকে দিয়াছে তাড়াইয়া। যশোদা বলিল, “এ আবার কেমন ধারা চাকৰী ৱে বাৰা ।” VO)