জিনিস। গালিচার মত পুরু ও নরম ফ্লানেলের কয়েকটা কাঁথা, ছেলেকে জড়াইয়া পুঁটলি করিয়া কোলে নেওয়ার জন্য ধবধবে সাদা কোমল তিনটি তোয়ালে আর আধা ডজন সেমিজের মত পাতলা লম্বা জামা। শেষোক্ত পদার্থগুলি মন্দাকে বিস্মিত করে।
— এগ্লো কি বৌ? আলখাল্লা নাকি?
শ্যামা হাসে — ঠাকুরঝি যেন কি! সায়েবদের ছেলেরা পরে দ্যাখো নি?
— তুমি যেন কত দেখেছ!
— দেখি নি! গড়ের মাঠে চিড়িয়াখানায় কত দেখেছি!
— ও, কত তুমি বেড়িয়ে বেড়াচ্ছ গড়ের মাঠে চিড়িয়াখানায়!
— না ঠাকুরঝি, ঠাট্টা নয়, আগে সত্যি নিয়ে যেত, চার-পাঁচবার গিয়েছি যে। সায়েবদের কচি কচি ছেলেদের এমনি জামা পরিয়ে ঠেলা গাড়িতে করে আয়ারা বেড়াতে আনত। এমন সুন্দর ছেলেগুলি, চুরি করে আনতে সাধ হত আমার।
পুরানো কাঁথার উপর শ্যামা নূতন কাঁথা বিছায়, ছেলের তৈলাক্ত পেনিটি খুলিয়া বিষ্ণুপ্রিয়ার দেওয়া আলখাল্লা পরায়, তারপর একখানা তোয়ালে জড়াইয়া শোয়াইয়া দেয়। আনন্দে অভিভূত হইয়া বলে — কি রকম দেখাচ্ছে দ্যাখো ঠাকুরঝি!
মন্দা হাসিমুখে সায় দিয়া বলে — খাসা দেখাচ্ছে বৌ। ওমা, মুখ বাঁকায় যে।
ছেলেকে শ্যামা সত্যসত্যই পুটুলি করিয়াছে। হাত না নাড়িতে পারিয়া সে হাঁপাইয়া কাঁদিয়া ওঠে। তোয়ালেটা শ্যামা তাড়াতাড়ি খুলিয়া লয়। মন্দা শিশুকে কোলে লইয়া বলিতে থাকে — অ সোনা, অ মানিক — তোমায় বেঁধেছিল, শক্ত করে বেঁধেছিল, মরে যাই!
শ্যামার গায়ে কাঁটা দেয়।
মাথা দুলাইয়া ঝোঁক দিয়া দিয়া মন্দা বলিতে থাকে — মেরেছে? আমার ধনকে মেরেছে? কে মেরেছে রে! আ লো আ লো — ন ন ন —
শ্যামা উত্তেজিত হইয়া বলে — ও ঠাকুরঝি, ও যে হাসলো।
মন্দা দেখিতে পায় নাই। তবু সে সায় দিয়া বলে — পিসীর আদরে হাসবে না?
কি আশ্চর্য কাণ্ড ঠাকুরঝি! ওইটুকু ছেলে হাসে!
এরকম আশ্চর্য কাণ্ড দিবারাত্রিই ঘটিতে থাকে। খোকার সম্বন্ধে এবার সে কিনা অনেক বিষয়েই উদাসীন থাকিবে ঠিক করিয়াছে, খোকার আশ্চর্য কাণ্ডগুলিতে