পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰহাৰলী আবছা অন্ধকারে ঢাকিয়া যায় না। দু’বেলা ধোয়া-মোছার ব্যবস্থা করিয়াও অবশ্য বাজারের নোংরামি আর দুৰ্গন্ধ এখনও দূর করা যায় নাই, কোনদিন যাইবেও না, তবু কুলীর দেহ ভদ্রলোকের দেহে পরিণত হওয়ার মত, বাজারে পরিবর্তন যে হইয়াছে, তাতে সন্দেহ নাই। দলে দলে যেসব নর-নারী আসিয়া এ অঞ্চলের নূতন ধরণের বাড়ীগুলিতে নীড় বঁাধিতেছে, সহরতলী পরিবৰ্ত্তিত আবেষ্টনীর সঙ্গে তাদের চাল-চলন বেশভূষা বেশ খাপ খায়। অনেকে বাস করিতে আসিয়াছে নিজের বাড়ীতে, অনেকে আসিয়াছে ভাড়াটে হইয়া । জমির দাম এত বাড়িয়া গিয়াছে যে বড়লোক ছাড়া বাড়ী করিয়া এ-অঞ্চলে বাস করা আর সম্ভব নয়। প্রথমদিকে যারা জমি কিনিয়া বাড়ী করিয়াছিল। অথবা তৈরী বাড়ী কিনিয়াছিল, তারা প্ৰায় অধিকাংশই না-বড়লোক ধরণের ধনী, বাড়ী করিতেই হয়ত অনেকের জীবনের সঞ্চয় ফুরাইয়া গিয়াছে। তবু এরাই প্ৰথমে এই সহরতলীকে ফ্যাশনেবল সহুরে রূপ দিয়াছে, এ অঞ্চলে বাস করার মৰ্য্যাদা ও সুবিধা বাড়াইয়াছে, আকর্ষণ সৃষ্টি করিয়াছে। তারপর আসিয়াছে বড় বড় চাকুরে, ব্যবসায়ী, জমিদার-দশগুণ কম দামে পাচ কাঠা জমি কিনিতে একদিন যাকে চোখে অন্ধকার দেখিতে হইয়াছিল তার ছোট বাড়ীখানার পাশে উঠিয়াছে বাগান ঘেরা প্ৰাসাদ । অনেক বন্তির চিহ্নও লোপ পাইয়াছে, কেবল সেগুলি বড় রাস্তার অনেক তফাতে ভদ্র পাড়ার পিছনে পড়িয়াছে সেগুলি টিকিয়া আছে-কোনটা সম্পূণ, কোনটা আংশিক । যশোদার বাড়ীর তিনদিকে নতুন বাড়ী উঠিয়াছে, কেবল কুমুদিনীর বাড়ী যেদিকে সেদিকটা আগে যেমন ছিল তেমনি আছে। রূপান্তরের ঢেউ যশোদার দুটি মুখোমুখি বাড়ী পৰ্যন্ত আসিয়া ঠেকিয়া গিয়াছে। যশোদা বাড়ী দু’টি বিক্ৰী করিলে সঙ্গে সঙ্গে এদিকের আট দশখানা বাড়ী পরিবর্তনের স্রোতে ভাসিয়া যাইত। বিক্ৰী করিবার জন্য এসব বাড়ী আর ফঁণাকা জমির মালিকেরা সকলেই উৎসুক হইয়া আছে, এ অঞ্চলে জমির দাম যে এত চড়িতে পারে পাঁচ সাত বছর আগে কেহ কল্পনাও করিতে পারে। নাই। সব বেচিয়া দিয়া সহৱে আরও তফাতে সস্তায় জমি কিনিয়া আবার তাৱা বাড়ী-ঘর তৈরী করিয়া নিবে, একটা মোটা টাকা হাতে থাকিয়া যাইবে। vour