পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী “তার মানে বাসকোর তালাটি ভেঙেছে আমার । ধন্য তুমি।” পায়ে একটা লোহার শিক বিধিয়া যাওয়া বাধা হিসাবে গণ্য করিবার মত গুরুতর ব্যাপার কিছু নয়। বাড়ী ছাড়িয়া যাওয়ার আর সব ব্যবস্থাই যখন হইয়া গিয়াছে, বাড়ীটা বিক্রয় করিতে পৰ্য্যন্ত বাকী আছে, কেবল হাতে টাকাটা পাইয়া দলিল রেজেক্ট্রী করা, ভারি ভারি জিনিষপত্ৰ প্ৰায় সমস্তই পঠাইয়া দেওয়া হইয়াছে সহরের অপর প্রান্তের আরেক সহরতলীর ভাড়াটে বাড়ীতে, রওনা হওয়ার আয়োজন, শুধু বাকী আছে ; গাড়ী ডাকিয়া বাকী জিনিষপত্র নিয়া গাড়ীতে উঠিয়া বসার, তখন পায়ে শিকি বেঁধাকে উপলক্ষ করিয়া হঠাৎ বাকিয়া বসার কোন অর্থ হয় না । যে সব কারণে যশোদা এ বাড়ী ছাড়িয়া এদিকের সহরতলী ছাড়িয়া জন্মের মত চলিয়া যাইতেছিল, পা একটু জখম হওয়ায় তার একটিও বাতিল হইয়া যায় নাই। তবু শেষ মুহুর্তে যশোদা ওই ছুতায় যাওয়াটাই বাতিল করিয়া দিল । ধনঞ্জয় বলিল, “এ পা নিয়ে যেতে তোমার কষ্ট হবে চাদের মা !” যশোদা চুপ করিয়া রহিল। তার এই গাম্ভীৰ্য ধনঞ্জয়ের কাছে চিরদিন বড় অস্বস্তিকর। একটু ভয়ে ভয়ে সে বলিল, “খুব ব্যথা করছে তো ?’ যশোদা ফোস করিয়া উঠিল, “কিসের ব্যথা ? আমার আবার ব্যথা-বেদন কিসের শুনি ?” ধনঞ্জয় আরও দমিয়া গেল !-“পায়ের কথা বলছি গো । তোমার ওই পায়ের কথা যাতে শিক বিধেছে । কম লেগেছে তোমার পয়ে ।” ‘না লাগেনি, একটুও লাগেনি। আমার আবার লাগালাগি কি ? মুখপোড়া ভগবান আমায় লোহা দিয়ে গড়েছে জানি না ?” ধনঞ্জয় বলিল, “গাড়ী ডাকি তবে ?” যশোদা বলিল, “থাক।” “আজি যাবে না ?” kaq o ধনঞ্জয় খুন্সী হইয়া বলিল, “আমিও তো তাই বলছি। তাড়াহুড়োর কি আছে ? পায়ের ব্যাথাটা কামুক, দু’দিন পরে গেলেও চলবে।” বলিতে বলিতে ধনঞ্জয়ের মুখে ম্যাজিকের মেঘের মত বিষাদের ছায়া VO)