পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী করিনি । মনটা ভাল নেই। কিনা, তাই কি বলতে কি বলেছি। বাড়ী-ভরা লোক ছিল আমার, তুমি ছাড়া আজি কেউ নেই, কি আদেষ্ট বলত আমার ? চোখ দিয়া জল গড়াইয় পড়ে যশোদার, আর বিহািবলের মত তাই দেখিতে থাকে ধনঞ্জয়। যশোদার মুখ সে গম্ভীর হইতে দেখিয়াছে, সহানুভূতিতে কোমল হইতেও দেখিয়াছে, কিন্তু সে মুখে বিষন্নতা কি কোনদিন নজরে পড়িয়ছিল তার ? যশোদা যে কঁাদিতে পারে, আর দশজন সাধারণ স্ত্রীলোকের মত দুঃখে জল আসিতে পারে তারও চোখে, কেবল ধনঞ্জয় নয়, যশোদাকে যার চেনে তাদের প্রায় সকলের পক্ষেই এটা কল্পনা করাও কঠিন ছিল । শূন্য বাড়ীতে শূন্য ঘরে খালি তক্তপোষের দুই প্রান্তে দু’জনে বসিয়া ছিল ৷ তক্তপোষের বিছানাপত্ৰ গুটিাইয়া বাধিয়া ফেলা হইয়াছে। ঘরের জিনিষপত্র যশোদা পা জখম হওয়ার অাগেই রোয়াকে টানিয়া নিয়া গিয়াছে । ধনঞ্জয় সরিয়া সরিয়া যশোদার গা ঘোষিয়া আসিয়া বসিল, কেঁাচার খুঁট দিয়া যশোদার চোখ মুছাইয়া দিল। যশোদার চোখ দিয়া জল পড়া যেমন আশ্চৰ্য্য ব্যাপার, ধনঞ্জয়ের কাণ্ডটা তার চেয়ে কম নয় । অন্য সময় এত সাহস ধনঞ্জয়ের হইত না । মানুষটাকে ঠেলিয়া সরাইয়া দেওয়ার বদলে যশোদা তার হাত নামাইয়া ধরিয়া রাখিল, বলিল, “হয়েছে। কচি খুকি না কি আমি, আদর করে কান্না থামাচ্ছে ?” ধনঞ্জয়ের জন্যই এবার যশোদার মন আরও খারাপ হইয়া যায় । বড় আত্মাগ্লানি সে বোধ করে । নিজের উপর রাগ ধরিয়া যায় । ধনঞ্জয় ছেলেমানুষ-বয়সে না হোক মনের দিক দিয়া সত্যই বড় ছেলেমানুষ । অতি তুচ্ছ একটু সাধারণ অন্তরঙ্গতাই যে মানুষটাকে খুন্সীতে গদগদ করিয়া দেয়, হাতে খেলনা পাওয়া শিশুর মত, অনেক বার সে তার প্রমাণ পাইয়াছে। কতবার সে ভাবিয়া রাখিয়াছে, লোকটার সঙ্গে কথায় ব্যবহারে একটু দূরত্ব বজায় রাখিয়া চলিতে হইবে । কোনমতেই তো কথাটা সে মনে রাখিতে পাৱে না ! সকলে তাকে ত্যাগ করিয়াছে শুধু ধনঞ্জয় ত্যাগ করে নাই, এই ভাবটাই শুধু মনে থাকিয়া যায়। তাকে ত্যাগ করার কারণ যে ধনঞ্জয়ের নাই, উপায়ও নাই, এটা যেন খেয়ালও থাকে না । NO(pN9 R