পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাণিক গ্রন্থাবলী

ভুলিতে পারে নাই, সে আসিয়াছে শুনিয়াই আনন্দে সে উত্তেজিত হইয়া উঠিল, কিন্তু আনন্দ তাহার টিঁকিল না। রাখালের ভাব দেখিয়া সে বড় দমিয়া গেল। এতকাল পরে তার দেখা পাইয়া রাখাল খুশী হইল মামুলি ধরণে, কথা বলিল অন্যমনে, সংক্ষেপে। শ্যামার ছেলের সম্বন্ধে তাহার কিছুমাত্র কৌতুহল দেখা গেল না।

 সারাদিন পরে বিকালে ব্যাপার বুঝিয়া মন্দা স্বামীকে বলিল — তুমি কি গো? বৌ কতবার ছেলে কোলে কাছে এল, একবার তাকিয়ে দেখলে না?

 রাখাল বলিল, দেখলাম না? ওই যে বললাম, তুমি রোগা হয়ে গেছ বৌঠান?

 মন্দা বলিল — দাদার ছেলে হয়েছে জানো? জানো আমার মাথা! ছেলেকে একবার কোলে নিয়ে একটু আদর করতে পারলে না? দাদা কি ভাববে!

 রাখাল বলিল — তোমায় আদর করে সময় পেলাম কই?

 মন্দা রাগ করিয়া বলিল — না বাবু তোমার কি যেন হয়েছে। তামাসাগুলি পর্যন্ত আজকাল রসালো হয় না।

 — তোমার কাছে হয় না। বৌঠানকে ডেকে আনো হবে।

 মন্দার অনুযোগের যে ফল ফলিল শ্যামার তাহাতে মনে হইল একটু গাল টিপিয়া আদর করিয়া রাখাল বুঝি ছেলেকে তাহার অপমান করিয়াছে। শ্যামার মনে অসন্তোষের সৃষ্টি হইয়া রহিল। জীবন-যুদ্ধে সন্তানের প্রত্যেকটি পরাজয়ে মার মনে ষে ক্ষুব্ধ বেদনার সঞ্চার হয়, এ অসন্তোষ তাহারই অনুরূপ। শ্যামার ছেলে এই প্রথমবার হার মানিয়াছে।

 পরদিন বিকালে রাখাল একাই ফিরিয়া গেল। মন্দা যাইতে রাজী হইল না, রাখালও বেশি পীড়াপীড়ি করিল না। যাওয়ার কথা মন্দাকে সে একবারের বেশি দুইবার বলিল কি না সন্দেহ। পথ ভুলিয়া আসার মত যেমন অন্যমনে সে আসিয়াছিল, তেমনি অন্যমনে চলিয়া গেল।

 কি জন্য আসিয়াছিল তাও যেন ভাল রকম বোঝা গেল না।

 শীতল গোপনে শ্যামাকে বলিল, রাখাল আবার বিয়ে করেছে শ্যামা।

 বলিল রাত্রে, শ্যামার যখন ঘুম আসিতেছে। শ্যামা সজাগ হইয়া বলিল — কেন ঠাট্টা করছ?

 — কিসের ঠাট্টা? ও মাসের সাতাশে বিয়ে হয়েছে। মন্দাকে এখন কিছু

৪৪