পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী তাছাড়া, অলকার গান শুনিয়া গান জানা কোন মেয়ের না হিংসা হয় ? “খুকুকে না ডাকলেও তো চলবে না দিদি ৷ সারেগামা শেখানো, গলা সাধানো, সোজা গান শেখানো এসব তো একজনের করা চাই ? এমন গান করে তুমি, তোমায় কি এসবের জন্য বলতে পারি ? তোমার সময়ই বা কই ? মাঝে মাঝে তুমি গিয়ে দু’একখানা ভাল গান শেখাবে, বাস-” তেল মাখাইতেও যশোদা কম পটু নয়, গৰ্বে আর আনন্দে অলকার মুখখান তেল মাখানো মুখের মতই চকচক করিতে থাকে। তখন যশোদা যায় বনলতার বাড়ী, মা ও মেয়েকে বুঝাইয়া বলে,- “আসলে খুকুই আমাদের গান শেখাবে, সব ভার থাকবে খুকুর ওপরে। অলকা মাঝে মাঝে আসে তো আসবে, দু’একখানা গান শিখিয়ে যাবে। মিহি গলা থাকলেই তো গান শেখানো যায় না, গান শেখাতে হলে সুর তাল শেখাতে হয়, নয় দিদি ?” খুকু গদগদ ভাবে বলে, “আরও কত কি আছে-গান শেখা কি সহজ ।” একটি হারমোনিয়ম, একটি এস্রাজ আর পাঁচ ছ’টি ছাত্রী নিয়া যশোদার ঘরোয় সঙ্গীত বিদ্যালয় আরম্ভ হয়। সকলের যে খুব বেশী উৎসাহ জাগিয়াছে তা নয়, সকলে ভাবিতেছে, যশোদার মতলবটা কি ? কিন্তু যশোদা জানে বিনা পয়সায় মেয়েদের গান শেখানোর সুযোগ কেউ ছাড়িবে না, মেয়েদের গান বাজনার চর্চা যারা পছন্দ করে না তারাও নয়। দু’চার দিনের মধ্যে ছোট বড় মেয়ের ভিড়ে তার ঘর ভরিয়া উঠিবে। এই তো সবে সুরু। সকলেই আজ এক ঘরে। অন্য সকলে এলোমেলো ভাবে যে যেখানে পারে বসিয়াছে, একটি আস্ত পাটি কেবল ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে গানের শিক্ষয়িত্ৰী আর ছাত্রীদের । হারমোনিয়মের একদিকে বসিয়াছে ছাত্রীরা, অন্যদিকে পরস্পরুর যতটা পারে তফাতে সরিয়া বসিয়াছে অলকা আর খুকু। কিন্তু এত কাছে বসিয়া, একই কাজ করিতে বসিয়া, পরামর্শ না করিয়া চুপ চাপ শুধু বসিয়া থাকিলে চলিবে কেন ? বিশেষতঃ সকলে যখন কি ভাবে গান শেখানো আরম্ভ হয় দেখিবার জন্য প্ৰতীক্ষা করিয়া আছে । তারা যে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে না, তাদের মায়েরাও বলে না, এটা তাই তখনকার মত তাদের ভুলিয়া যাইতে হয়। 8 a