পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী সম্বন্ধ ঠিক করার সময় সে একবার বলিয়াছিল, “আরেকটু চলনসই পাত্ৰ আনিলে হ’ত না ?” সত্যপ্রিয় মুখ ভার করিয়া বলিয়াছিল, ‘কেন ?? “কি জান, তোমার মেয়েকে যদি ছেলেটির পছন্দ না হয় ? নিজের চেহারার জন্যেই এ সমস্ত ছেলের মাথা গরম হয়ে থাকে, টাকার লোভে যদি বা বিয়ে করে, খুব সুন্দরী মেয়ে না পেলে নিজের সঙ্গে মানায়নি ভেবে মনটা হয়তো খুত খুত করবে।” ‘সবাই কি তোমার মত ভাবপ্রবণ ভাই ।” “তা মানুষ একটু ভাবপ্রবণ বৈকি। টাকা দিয়ে গরীবের ছেলে কিনছ, ছেলে তোমাদের সকলের অনুগত হয়ে থাকবে বটে, কিন্তু তাতে কি ছেলে আর মেয়ের মনের মিল হবে ? আর মনের মিল যদি না হ’ল-’ কিন্তু সত্যপ্রিয় বুঝিতে পারে নাই। সে যাকে কিনিয়া আনিতেছে, বাড়ীতে রাখিতেছে, জীবিকার উপায় করিয়া দিতেছে, তার মেয়ের মনে কষ্ট দেওয়ার মত স্পৰ্দ্ধা কখনও তার হইতে পারে। বিবাহের এক বছরের মধ্যে মেয়ের মুখের হাসি নিভিয়া যাইতে দেখিয়া সে তাই অবাক হইয়া গিয়াছিল । তারপর তার চোখের সামনে চিরস্থায়ী বিষাদ মেয়ের মুখকে আশ্রয় করিয়াছে, কেমন যেন উদাস উদাস চাহনি হইয়াছে মেয়ের । অথচ যামিনীর স্বভাব খুব নম্র, তার মত শান্তশিষ্ট নিরীহ গোবেচারী জামাই পাওয়াই কঠিন। সত্যপ্ৰিয়ের সঙ্গে কখনো মুখ তুলিয়া কথা বলে না । বাড়ীর কারে সঙ্গে কখনো তর্ক করে না। বৌ-এর সঙ্গে একটা দিনের জন্যও কোনদিন সে কলহ করিয়াছে বলিয়া কেউ শোনে নাই। চরিত্রও তার খারাপ নয়, হঠাৎ বড় লোকের জামাই হইয়া হাতে অনেক টাকা পাইয়াও ব্যক্তিরে স্ফৰ্ত্তি করার দিকে তার একটুকু টান দেখা যায় না । তবে ? যোগমায়া মাঝে মাঝে লুকাইয়া লুকাইয়া কঁদে কেন ? নিরুপায় আপশোষে সত্যপ্রিয়ের হাত-পা কামড়াইতে ইচ্ছা করে। কিছুই করিবার নাই, কিছুই বলিবার নাই। যামিনী যদি মেয়েকে তার মারিত, মদ খাইয়া মাতলামি করিত, কিংবা অন্য কোন স্পষ্ট অপরাধে মেয়ের চোখের জল আনিত, সে তাকে উপদেশ দিতে পারিত, শাসন করিতে পারিত, চাপ দিয়া সিধা করিয়া দিতে পারিত। কিন্তু এখানে যে কোন প্যাচ পৰ্যন্ত 80)