পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী বলিল “শ্বশুরের অন্ন আর কতকাল ধবংস করব চাদের-মা ? তাই ভাবছি, অজিতবাবুর মতো আপনার এখানে ঘর ভাড়া করে থাকব।” “এক ?” “উহু, সবাইকে নিয়ে থাকিব-অজিতবাবুর মতো।” যশোদা হাসিয়া ফেলিল । সত্যপ্ৰিয়ের মেয়েকে নিয়া যামিনীর তার বাড়ীতে ঘরভাড়া করিয়া থাকিবে । এমন ছেলেমানুষী কথা যশোদা জীবনে কখনো শোনে নাই । “ঝগড়া হয়েছে বুঝি শ্বশুরের সঙ্গে ?” “ঠিক ঝগড়া নয়, ওখানে আর বাস করা যায় না। কি কুক্ষণেই যে বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করেছিলাম চাদের-মা !” প্রথমটা হাসিয়া উড়াইয়া দিলেও শেষ পৰ্য্যন্ত যশোদা ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝিতে পারে। একটু সহানুভূতি পাইয়াই যামিনীর মুখ খুলিয়া যায়, ফেণাইয়া ফাপাইয়া বাড়াইয়া কমাইয়া অবিরাম সে বড়লোকের, বিশেষ করিয়া সত্যপ্ৰিয়ের মেয়েকে বিবাহ করার ট্র্যাজেডি বর্ণনা করিয়া যায়, দুর্ভাগ্যের ইতিহাস যেন তার শেষ হইবে না। ব্যাপারটা বুঝিতে যশোদার বিশেষ কষ্ট হয় না, সত্যপ্রিয়কে সে তো চেনেই, যামিনীর মত ছেলেরাও তার অজানা নয়। অন্য কারও ঘরজামাই হইলে যামিনীকে সে আমল দিত। কিনা সন্দেহ, সন্ত্রীক যামিনীকে বাড়ীতে থাকিতে দিলে যে হাঙ্গামা আরম্ভ হইবে সেটা সে বেশ অনুমান করিতে পারে। তাছাড়া, বেশীদিন বড়লোক শ্বশুরকে অবহেলা করিয়া শ্বশুরবাড়ীর আরাম ছাড়িয়া এখানে বাস করিয়া থাকিবার মানুষও যামিনী নয়, তার বড়লোক শ্বশুরের কন্যাটিও নয়। সত্যপ্ৰিয়ের কাছ হইতে একবার ডাক আসিলেই দু’জনে ফিরিয়া যাইবে । সত্যপ্রিয়কে একটু নরম করার জন্য এ বিদ্রোহ। তবু দু’দিনের জন্যও সত্যপ্রিয়কে একটু বিপাকে ফেলা চলিবে শুধু এই জন্যই যশোদা যামিনীর প্রস্তাবে রাজি হইয়া গেল । প্ৰতিহিংসা ? তাছাড়া আর কি বলা চলে। মুখোমুখি দু’টি বাড়ীতে পঁচিশ ত্রিশটি মানুষ নিয়া যশোদার ছিল গুছানো সুখের সংসার, সত্যপ্রিয় সে সংসারা ভাঙ্গিয়া ፃኣካ”