পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰতিবিম্ব মিটিং, পুজা-পার্বণের উৎসব করা যাবে না, রামবাবুর পাটিতে যোগ দিয়ে চাষী মজুরদের জাগিয়ে তুলবার কল্পনা কোনদিন কাৰ্যে পরিণত হবে না। রামবাবুৱা অনেক কাজ সে করে দিয়েছে। রামবাবুর অনুরোধে সেবার সে ঘুরে ঘুরে অনেক চেষ্টায় সাতশো চাষীকে সদরে এনে হাজির করেছিল। সেই থেকে রামবাবু তাকে রীতিমত শ্রদ্ধা করেন। দলে যোগ দিলে ভাল ট্রেনিং দিয়ে তাকে কলকাতা পাঠাবার কথা রামবাবু কতবার বলেছেন। সে না কি পারবে,-অনেক কিছু করতে পারবে । ক্ৰমে ক্ৰমে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বেশী বেশী, ক্রমে ক্রমে সে উঠবে উচুতে, একদিন দেখা যাবে পাটির সে একজন বড় নেতা হয়ে দাড়িয়েছে। আজ কাল করে পাটিতে আর নাম লেখানো হয় নি। ট্রেনিং, ডিসিপ্লিন, দায়িত্ব, এই সব কথাগুলি সম্বন্ধে তারকের একটা স্বাভাবিক বিতৃষ্ণা আছে, ভয় আছে। রামবাবুর সঙ্গে ট্রেইনড ডিসিপ্লিনড দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন সহকারী হিসেবে দু’তিন সপ্তাহ সে কাজও করেছে, জলে ভেজা, কাদা ভাঙ্গা, নোংরা পাটিতে ইট মাথায় দিয়ে শোয়া, এসব কষ্টকে সে কষ্ট বলেই গণ্য করে নি । বন্ধু, তাস, রেস্টরেন্ট, সিনেমার অভাব অনুভব করার সময়ও পায় নি। কিন্তু এখানে কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না, কিছু করা বা না করা ছিল তার ইচ্ছাধীন। একবার দলে ঢুকে পড়লে যদি একই সময়ে তার নিজের সিনেমা যাওয়ার ইচ্ছার সঙ্গে দলের কোন নির্দেশের সংঘর্ষ বাধে ? সমস্ত পথ তারকের নির্যাতিত মন এবারকার মত রেহাই পাবার উপায় খুঁজে আকুলি বিকুলি করে। বৌ সারা মন জুড়ে থাকলেও সে স্পষ্ট অনুভব করে, সমাজ সংসার মিছে নয়, শুধু সংসারটাই মিছে। ষ্টেশনে একটি বিশ-বাইশ বছরের ছেলে তারককে সাদর অভ্যর্থনা জামাল। সে রামবাবুৱা পাটির লোক। রামবাবু আগেই চিঠি লিখে দিয়েছিলেন। ছেলেটির নাম শৈলেশ । আকারে সে খুব ছোট, তবে খারাপ দেখায় না। বালকের মত সর্বাঙ্গের হ্রস্বতায় সুন্দর সামঞ্জস্য আছে। মন্ত একজোড়া চশমা তার মুখে সর্ব 8 p. 9p