পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী বিদ্যাবিশারদের ছাপ ফেলেছে। তাতেও সামঞ্জস্য নষ্ট হয় নি। ‘রামলালবাবু এমন বৰ্ণনা দিয়েছেন। আপনার যে দেখেই চিনতে পেরেছি। আসুন আমার সঙ্গে । বিছানা এনে ভালই করেছেন ।” “ভাবছিলাম। একটা মেসে গিয়ে-’ শৈলেশ বিস্মিত হয়ে বলল, “কমরেড চক্রবর্তী যে লিখলেন, আপনি আমাদের সঙ্গে ক’দিন থাকবেন ? যাকগে, নেয়ে খেয়ে বিশ্রাম করবেন চলুন তো, তারপর মেসের কথা ভাব যাবে I* \ শৈলেশ হাসল, “আমাদের ওটাও একরকম মেস-একটু খাপছাড়া মেসি।” গলির মধ্যে দোতলা একটি পুরানো বাড়ি, নিজের তলাটা একটু সঁ্যাতসেঁতে । দোতলার সিড়িটা কাঠের এবং ধাপগুলি অপ্রশস্ত। বিশেষ কায়দায় পা ফেলে ওঠানামা করতে হয় এবং কায়দাটি আয়ত্ত করতে রীতিমত কিছুদিনের অভ্যাস দরকার । ছোট বড় ঘর অাছে সাতখানা । এই বাড়িতে কোনদিন পনের কোনদিন পচিশজন মেয়ে পুরুষ বাস করে। সংখ্যার বাড়তি কমতিটা হয় বেশীর ভাগ পুরুষদের । সকালে দুপুরে সন্ধ্যায় মেয়েরা অনেকে আসে যায়, কিন্তু তারা সকলে ঠিক এখানে বাস করে না । আধা ঘণ্টা বাড়ির যেখানে খুলী বসে চুপচাপ চারিদিকে লক্ষ্য করলে আপনা থেকে মনে হয় কয়েকটি বাঙ্গালী পরিবার যেন এ বাড়িতে ভেঙ্গেছে এবং মোটা রকম বাইরের উপাদান সংগ্ৰহ করে একটি সাৰ্বজনীন পরিবার সৃষ্টি হয়েছে । বাড়ির চার জোড়া স্বামী-স্ত্রীকে আবিষ্কার করতে তারকের বেলা দুপুর হয়ে গেল । অনাবশ্যক পরিচয় কেউ করিয়ে দেয় না, আবার অকারণে কেউ আলাপ-পরিচয় করে এমনভাবে যেন জোর টানা হচ্ছে বহু পুৱানে বন্ধুত্বের, নাম-ধামটা জানাই শুধু বাকী ছিল। এক ঘরে জন পাঁচেক যুবক তর্ক করছিল, এক কোণে শাড়ীর পাড়ের ঢাকনি দেওয়া বাক্সের ওপর বই রেখে পড়া করছিল তরুণী একটি বৌ ।। ঘরের মাঝখানে সতরঞ্চিতে তারককে বসতে দেওয়া হয়েছিল। মুখ হাত ধুয়ে যেই সে আবার সেখানে বসেছে, পাঠরতা বৌটি উঠে গিয়ে তাকে এক কাপ চা আর দু’খানা আটার রুটি এনে দিলন। তারপর দিল নিজের পরিচয় । “আমি পুষ্প সোম। কমরেড নিশীথ সোমের স্ত্রী, ওই উনি।” নিশীথ এক গাল হেসে তারকের মনোহরণ করে বলল, ‘দাঁড়ান মশায় একটু, p