পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী পড়ে। ছ'মাস আগে যে চাষী ছিল হাজার বোঝালেও সে কিছু বুঝত না, ছ'মাস ফ্যাক্টরীতে কাজ করে তার বোধশক্তি জন্মে। জিন্দাবাদ বলতে শেখে। বড়লোকের টাকা আগে ইণ্ডাস্ট্রিীতে না লাগালে-” দীঘল নাকি উচ কপালে করুণা বলে, “তা’তে ক্যাপিটালিস্ট প্রশ্রয় পাবে।” নিশীথ বলে, “পাবে। মজুরও বাড়বে। সৰীস্টেমটাকে গড়ে উঠতে না দিলে কি ভাঙ্গাবার জন্য তুমি বিপ্লব আনবে, লড়বে কার সঙ্গে ? শিশুর সঙ্গে যুদ্ধ চলে না । কলকারখানায় যে টাকা খাটে সেটা অন্ততঃ ক্যাপিটালিস্টের পকেটে থাকে না, বৃটিশ ফরেন এক্সচেঞ্জের ইণ্ডিয়ান ডেবিট ক্রেডিট নামে উল্টো গতি পায় না। কলকারখানায় টাকা খাটুক, ক্যাপিটালিস্ট বাড়কে লক্ষ লক্ষ বাড়তি বেকার-চাষী মজুৱা হোক, তখন কিছু করা যাবে। কোন দেশে কোন কালে ক্যাপিটালিস্টের পকেটের টাকা কেউ বাগাতে পারে নি, কারণ ও টাকাটা তখন আর টাকাই থাকে না ।” কোটপ্যান্ট পরা সীতানাথ পা ছড়িয়ে দু’হাতে ভর দিয়ে বসেছিল,-“তুমি সব সময় “কোন কালে কোন দেশের কথা বল।” অথচ তোমার হিস্টরিক্যাল সীমেট্রির বোধ নেই, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকগ্ৰাউণ্ড তোমার কাছে ঝাপসা হয়ে আছে, তুমি শুধু ইণ্ডিয়াকে দেখতে পাও । তুমি ভুলে যাও যে সোস্তাল সায়েন্সের নিয়মগুলি দেশ কাল নিরপেক্ষ ।” নিশীথ মৃদু হেসে বলল, “তুমিও ভুলে যাও সোস্যাল সায়েন্সের শৈশবও এখনো উৎরোয় নি। তোমাদের কি হয়েছে জানো, সোভিয়েট নেতাদের দৃষ্টি দিয়ে দেশকে দেখছি। রাগ করো না, একটা উপমা দিচ্ছি। ইংরেজীপনা একদিন যেমন আমাদের মধ্যে মত্তত এনেছিল, তোমাদেরও তেমনি রুশপনার মত্ততা এসেছে। এখনো স্বদেশীপনার রূপ দিতে পার নি, জাতি না হয়েই আন্তর্জাতিকতার মন্ত্র জপছ। মস্কো থেকে ইংলণ্ড হয়ে ভারত হয়ে একটা তার মস্কোতে পৌচেছে-এই হল তোমাদের আন্তর্জাতিকতার রূপ। ভারতে শুধু তারটা আছে-আস্ত তাৱ, এখানে ওখানে কেটে একটা টেলিফোন বসাতে পার নি। মস্কো-ইংলণ্ড আন্তর্জাকতার তারটা ভারতে শুধু হাওয়ায় কেঁপে একটু গুঞ্জন করেছে, তাতেই এতোমরা খুলী! তা, সে তারটাও কট করে কেটে দিয়েছে সেদিন।” }” তারক বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাতে শৈলেশ তাকে আলোচনার গোড়ার কথাটা বুঝিয়ে 37